কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চার ফল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন এই উপহারগুলো

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চার ফল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন এই উপহারগুলো

কোলেস্টেরল: শরীরের বন্ধু, আবার শত্রুও

শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য কিছুটা কোলেস্টেরল দরকার। ভাল কোলেস্টেরল অর্থাৎ এইচডিএল আমাদের রক্তনালীকে পরিষ্কার রাখে ও সুস্থ কোষ গঠনে সাহায্য করে। কিন্তু যখন খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বেড়ে যায়, তখন তা রক্তনালীর ভেতরে জমতে শুরু করে। এর ফলেই বাড়তে থাকে ব্লকেজ, রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়, আর শেষমেশ বাড়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত জীবনযাপন ও সঠিক খাবার নির্বাচনই পারে এই বিপদকে অনেকটা কমাতে।

খাদ্যাভ্যাস বদলানোই প্রথম অস্ত্র

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত ছোটখাটো পরিবর্তনই বড় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তেল-চর্বি ভাজাভুজি কমিয়ে ফলমূল ও আঁশজাতীয় খাবার বাড়ানো প্রয়োজন। ডায়েটিশিয়ান আয়ুশি যাদবের মতে, প্রকৃতির কিছু ফল এমন আছে যেগুলো নিয়মিত খেলেই শরীর খারাপ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। শুধু ওষুধ নয়, সঠিক খাদ্যই হতে পারে হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

এপ্রিকট: ফাইবারের পাওয়ার হাউস

ডায়েট চার্টে সহজেই জায়গা করে নিতে পারে এপ্রিকট। এই ছোট ফলটিতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দিতে সহায়ক। ফাইবার শিরায় জমে থাকা ফ্যাট শোষণ করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রাই ফ্রুট হিসেবেও এপ্রিকট খাওয়া যায় এবং এটি পেট ভরা রাখতেও কার্যকর। যারা অতিরিক্ত খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁদের জন্যও এপ্রিকট হতে পারে দারুণ সঙ্গী।

খেজুর: প্রকৃতির স্বাস্থ্যধন

খেজুরকে অনেকেই শুধু এনার্জির উৎস হিসেবে জানেন। কিন্তু এই ছোট ফলটির ভেতরে লুকিয়ে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রচুর আঁশ, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা রাখে। চিকিৎসকেরা বলছেন, নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তের শিরা নমনীয় হয় এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমার প্রবণতা হ্রাস পায়। আরেকটি বিশেষ গুণ হল, খেজুর প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। ফলে কৃত্রিম চিনি না খেয়ে মিষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে এই ফল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে এটি উপকারী হতে পারে।

অ্যাভোকাডো: স্বাস্থ্যকর চর্বির আধার

পশ্চিমে বহুদিন ধরেই অ্যাভোকাডোকে বলা হয় ‘সুপারফুড’। কারণ এতে রয়েছে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং বিটা-সিটোস্টেরল, যা শরীরের এলডিএল কমিয়ে এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাভোকাডো খাওয়ার সুবিধা হল এটি নানা রেসিপিতে ব্যবহার করা যায়—সালাদ, স্মুদি বা স্যান্ডউইচে সহজেই মিশিয়ে নেওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা ফাস্টফুডের প্রতি আকৃষ্ট হন, তাঁদের জন্য অ্যাভোকাডো হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, যা একদিকে শরীরকে এনার্জি দেয়, অন্যদিকে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আপেল: প্রতিদিনের ঢাল

‘প্রতিদিন একটি আপেল, ডাক্তার রাখে দূরে’—এই প্রবাদটি নিছক কথার কথা নয়। পলিফেনল ও সলিউবল ফাইবারে সমৃদ্ধ আপেল শরীরের শিরায় জমে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলকে গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খান, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কম। উপরন্তু, আপেল হজমশক্তি বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। এককথায়, এটি কোলেস্টেরল কমানো ছাড়াও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য এক অপরিহার্য ফল।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: সতর্ক থাকুন সবসময়

তবে মনে রাখা দরকার, শুধু ফল খাওয়াই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান থেকে দূরে থাকা, এবং তেল-চর্বি কম খাবার খাওয়াই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মূল মন্ত্র। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনও ডায়েট শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কারণ ব্যক্তিভেদে শরীরের প্রয়োজন আলাদা। তাই নিজস্ব শরীরের অবস্থার কথা মাথায় রেখেই খাবার তালিকা নির্ধারণ করা জরুরি।

খাদ্যেই লুকিয়ে সমাধান

আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই মনে করেন সুস্থ থাকতে শুধুই ওষুধই ভরসা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রাকৃতিক খাবারই হতে পারে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধক। এপ্রিকট, খেজুর, অ্যাভোকাডো আর আপেল—এই চার ফল প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে শুধু কোলেস্টেরলই কমবে না, বরং শরীরও থাকবে চনমনে। সুস্থ হৃদয় মানেই সুস্থ জীবন, আর তার শুরু হয় প্রতিদিনের খাবার থেকেই।

Leave a comment