সকালের অভ্যাসে কফির স্থান
শহর থেকে গ্রাম—দিন শুরু করার আগে সকালের এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে বহু মানুষের কাছে। কেউ বলেন মন চাঙ্গা করার জন্য, কেউ বলেন ঘুম কাটাতে কফির জুড়ি নেই। তবে আরেকটি প্রবল বিশ্বাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে আছে—সকালের কফি না খেলে কোষ্ঠ সাফ হয় না। ফলে অনেকে কফির কাপে চুমুক না দিয়ে শৌচাগারে ঢুকতেই চান না।
ক্যাফিনের সঙ্গে অন্ত্রের সম্পর্ক
চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডাক্তার রিঙ্কেশ কুমার বনসল জানালেন, কফি এবং অন্ত্রের মধ্যে সরাসরি যোগ রয়েছে। কফির প্রধান উপাদান ক্যাফিন কোলনের সংকোচন এবং প্রসারণকে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলেই অন্ত্র খালি করার বেগ আসে। অনেক সময় এই প্রক্রিয়া এতটাই ত্বরান্বিত হয় যে সকাল সকাল কফির কাপ ধরলেই স্বস্তি মেলে অনেকের।
শুধু ক্যাফিন নয়, আরও কিছু উপাদান
ক্যাফিন ছাড়াও কফিতে থাকে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। এই উপাদান শরীরে হজমের সহায়ক উৎসেচক নিঃসরণকে ত্বরান্বিত করে। ফলে খাওয়ার পর হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং সহজ হয় মলত্যাগ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিয়মিত কফি পানকারীরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কম ভোগেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি একেবারেই বৈজ্ঞানিক সত্যি।
সবার শরীরে একইভাবে কাজ করে না
তবে এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসকদের মতে, কফির প্রভাব সবার শরীরে এক রকম হয় না। কারও ক্ষেত্রে কফি কোষ্ঠ সাফ করতে সাহায্য করলেও কারও শরীরে উল্টো প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত কফি খাওয়ার কারণে হজম গোলমাল হয়ে যায়, এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যায়। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে তোলে।
ডিহাইড্রেশনের বিপদ
কফি যেহেতু ডাইইউরেটিক অর্থাৎ প্রস্রাব বাড়িয়ে দেয়, তাই অতিরিক্ত কফি পান করলে শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। জলশূন্য হলে অন্ত্র শুকিয়ে যায়, মল শক্ত হয়ে যায় এবং সহজে বেরোতে চায় না। অর্থাৎ কফি খেয়ে কোষ্ঠ সাফ করার চেষ্টা করতে গিয়ে উল্টে সমস্যা ডেকে আনা সম্ভব।
অভ্যাসের গুরুত্ব
কফি শরীরে কীভাবে কাজ করবে, তা নির্ভর করে প্রতিদিন একজন কতটা কফি পান করছেন তার উপর। যাঁরা দিনে দু’এক কাপ কফি খান, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু যাঁরা অতিরিক্ত পান করেন, তাঁদের শরীরে সমস্যাই বাড়তে পারে। ফলে অভ্যাস ও মাত্রা—এই দুটি বিষয়ই এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু কফি নয়, জলও চাই
পুষ্টিবিদরা বলছেন, কফি পান করার পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি। অর্থাৎ দিনে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। জল শরীরের হজম ও নিঃসরণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। শুধু কফির উপর নির্ভর করলে কাজ হবে না। বরং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, প্রচুর শাকসবজি, ফল এবং নিয়মিত জলপান শরীরকে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে বাঁচায়।
কফির সীমাবদ্ধতা
অস্থায়ীভাবে কফি কোষ্ঠ সাফ করতে সাহায্য করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর উপর ভরসা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—অতিরিক্ত কফি নির্ভরতা শরীরের প্রাকৃতিক হজম চক্রকে বিঘ্নিত করতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে আরও জটিল সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বিকল্প উপায়
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, কফি নয় বরং স্বাভাবিক জীবনযাপনই হোক কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিষেধক। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং জল—এই চারটি বিষয় মেনে চললে অন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শেষকথা
সকালের এক কাপ কফি মানসিক সতেজতা এনে দেয়, হজম প্রক্রিয়াকেও খানিকটা সাহায্য করে—এ কথা ঠিক। কিন্তু একে স্থায়ী সমাধান ভেবে নেওয়া বিপজ্জনক। কফি কেবল অস্থায়ী সহায়ক, কিন্তু শরীরকে সত্যি সুস্থ রাখতে হলে দরকার সুষম খাদ্যাভ্যাস ও জলীয় সমতা বজায় রাখা। তাই কফি ভালোবাসলেও তার উপর অতিরিক্ত ভরসা না করাই শ্রেয়।