বর্ষাকালীন অধিবেশনে সরকারের বিরুদ্ধে কোমর বাঁধছে কংগ্রেস

বর্ষাকালীন অধিবেশনে সরকারের বিরুদ্ধে কোমর বাঁধছে কংগ্রেস

আগামী সংসদীয় বর্ষাকালীন অধিবেশনটি এবার বেশ হট্টগোলের সম্ভাবনা নিয়ে আসছে। এই অধিবেশন ২১শে জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২১শে আগস্ট পর্যন্ত চলবে। কংগ্রেস পার্টি ইতিমধ্যেই এই অধিবেশনের জন্য তাদের কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংসদে জোরালোভাবে উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নয়াদিল্লি: সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন ২০২৫ (Monsoon Session 2025) ২১শে জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২১শে আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এবারের অধিবেশনটি বেশ হট্টগোলপূর্ণ এবং রাজনৈতিক দোষারোপে পরিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কংগ্রেস পার্টি এই অধিবেশনে কেন্দ্র সরকারকে কোণঠাসা করতে সম্পূর্ণভাবে কোমর বেঁধে নেমেছে। 

কংগ্রেস তাদের সংসদীয় কৌশলগত দলের (Parliamentary Strategy Group) মাধ্যমে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি সেই বিষয় জোরালোভাবে তুলবে যা জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যেগুলিতে সরকারের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে রয়েছে।

কংগ্রেসের প্রস্তুতি: কোন কোন বিষয়ে সরকারকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা?

কংগ্রেস পার্টি এবার এমন বেশ কয়েকটি বিষয় সংসদে জোরালোভাবে উত্থাপন করতে চলেছে যা বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই প্রধান বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে:

  • বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR): কংগ্রেসের অভিযোগ, এই পদক্ষেপটি অসাংবিধানিক এবং এর উদ্দেশ্য হল ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। দলটির দাবি, নির্বাচন কমিশন যেন অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া বাতিল করে।
  • অপারেশন সিঁদুরে কথিত ত্রুটি: কংগ্রেস এই সামরিক অভিযানের সময় হওয়া কথিত কৌশলগত ভুল এবং ক্ষতির বিষয়ে সরকারের জবাব চাইবে।
  • কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা, বিশেষ করে পাহালগাম হামলা: এই ইস্যুতে সরকার জবাব দিতে পারে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে তারা।
  • ভারতে মার্কিন শুল্ক: আমেরিকার আরোপিত নতুন শুল্ক নিয়েও সংসদে আলোচনার দাবি উঠতে পারে। কংগ্রেসের মতে, এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ভারতীয় শিল্প এবং ব্যবসার উপর।
  • অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব: জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত এই তিনটি প্রধান বিষয় কংগ্রেসের এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে। সরকার এই বিষয়গুলিতে নির্দিষ্ট জবাব এবং পরিকল্পনা দিক সেই বিষয়ে কংগ্রেস আগ্রহী।
  • ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত দাবি: প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার দাবির বিষয়েও কংগ্রেস সরকারের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য বলতে পারে।

মহাবিযোগ প্রস্তাব অধিবেশনের সম্ভাব্য প্রধান বিষয়

ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর কুমার যাদবের বিরুদ্ধে মহাবিযোগ প্রস্তাবও এই অধিবেশনে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। এছাড়াও, দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে মার্চ ২০২৫-এ তাঁর বাসভবন থেকে নগদ অর্থ উদ্ধারের অভিযোগের ভিত্তিতে মহাবিযোগ প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই বিষয়ে সরকারের বিরোধী দলের সমর্থন প্রয়োজন হবে এবং এটি বিরোধীদের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার আরও একটি সুযোগ হতে পারে।

বিরোধী দলের জোট: যৌথ কৌশলের উপর কংগ্রেসের মনোযোগ

কংগ্রেস পার্টি শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতায় নয়, বরং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে এবার সরকারকে কাঠগড়ায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কংগ্রেস সভাপতি এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, বিরোধী দল এবার একজোট হয়ে সংসদে সরকারের কাছে প্রতিটি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করবে। খাড়গে বলেছেন, এবার সংসদে শুধু লোক দেখানোর মতো বিতর্ক নয়, বরং কৌশলগত, বৈদেশিক নীতি, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলির উপর একটি অর্থপূর্ণ আলোচনা হওয়া উচিত। তিনি রাজ্যসভার সভাপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে এই দাবিও জানিয়েছেন যে, বিরোধী দলগুলির উত্থাপিত বিষয়গুলিকে যেন সময় এবং অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

খাড়গের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনায়

মল্লিকার্জুন খাড়গে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X (পূর্বে Twitter)-এ লিখেছেন - বিরোধী দল ২১শে জুলাই থেকে শুরু হতে চলা সংসদ অধিবেশনটিকে গঠনমূলক এবং উপযোগী করতে চায়। এটি তখনই সম্ভব হবে যখন সরকার বিতর্কের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত, রাজনৈতিক, বৈদেশিক নীতি এবং আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলির উপর আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে। এবারের অধিবেশনটি এই কারণেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ:

  • দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনীতির মন্দা নিয়ে বিরোধী দল সরকারকে কোণঠাসা করতে প্রস্তুত।
  • লোকসভা নির্বাচন ২০২৯-কে মাথায় রেখে কংগ্রেস এবং অন্যান্য দল এই অধিবেশনের মাধ্যমে সরকারের নীতিগুলিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইবে।
  • সংসদের ভিতরে এবং বাইরে উভয় স্থানেই রাজনৈতিক বাগ্‌যুদ্ধ তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কংগ্রেসের এই অধিবেশনের জন্য তৈরি করা কৌশল বিরোধী ঐক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি TMC, AAP, SP, DMK, RJD-এর মতো বড় দল কংগ্রেসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসদে দাঁড়ায়, তবে সরকারের জন্য অনেক বিষয়ে জবাব দেওয়া কঠিন হতে পারে।

Leave a comment