দিল্লি: জল সরবরাহ ব্যবস্থাও বেসরকারি খাতে, আশঙ্কা গ্রাহকদের

দিল্লি: জল সরবরাহ ব্যবস্থাও বেসরকারি খাতে, আশঙ্কা গ্রাহকদের

দিল্লি সরকার এবার বিদ্যুতের পর জলেরও বেসরকারিকরণ করতে চলেছে। জল বোর্ডকে ৮টি জোনে ভাগ করে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। RWA-এর বিরোধিতা, গ্রাহকদের উপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা।

দিল্লি সংবাদ: দিল্লি সরকার জল সরবরাহ ব্যবস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। জল বোর্ডকে আটটি জোনে ভাগ করে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করা হবে, যারা জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থাপনা এবং বিল আদায়ের কাজ দেখাশোনা করবে। সরকারের দাবি, এর ফলে জলের অপচয় কমবে, কিন্তু রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (RWA) এটিকে গ্রাহকদের উপর বোঝা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে।

দিল্লি সরকারের বড় সিদ্ধান্ত

দিল্লি সরকার জল সরবরাহ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এর অধীনে দিল্লি জল বোর্ডকে আটটি জোনে ভাগ করা হবে এবং প্রতিটি জোনে একজন বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। এই অপারেটররা জল বিতরণ, নিকাশি রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিলিংয়ের মতো দায়িত্ব পালন করবে।

বেসরকারি অপারেটরদের দায়িত্ব কী কী

বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে পানীয় জলের নিয়মিত সরবরাহ, নিকাশি লাইনের মেরামত, অ-রাজস্ব জল (Non-Revenue Water) কমানো এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে সময় মতো বিল আদায়ের মতো কাজ দেওয়া হবে। সরকারের মতে, এর ফলে জল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা আসবে।

দিল্লিতে জলের বর্তমান পরিস্থিতি

দিল্লি জল বোর্ড বর্তমানে ন’টি জল শোধন প্ল্যান্ট এবং ১৫,৬০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রায় ২৯ লক্ষ গ্রাহককে জল সরবরাহ করে। তা সত্ত্বেও, শহরের অনেক এলাকায় দূষিত জল, অনিয়মিত সরবরাহ এবং নিকাশির সমস্যা লেগেই আছে।

অ-রাজস্ব জলের গুরুতর চ্যালেঞ্জ

জল বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রায় ৫০% জল হয় চুরি হয়, না হয় নষ্ট হয়। এই ধরনের জলকে 'অ-রাজস্ব জল' বলা হয়, যার ফলে বোর্ডের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। বেসরকারি কোম্পানি এনে এই ক্ষতি কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বেসরকারিকরণের প্রসঙ্গ

সরকারের বক্তব্য, যেমন ২০০২ সালে বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের ফলে সরবরাহ উন্নত হয়েছিল এবং চুরি কমেছিল, তেমনই জলের অবস্থাও সুধারাতে পারে। জলমন্ত্রী প্রবেশ বর্মা-র মতে, ‘একটি জোন, একটি অপারেটর’ নীতি কার্যকর করে এই ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।

আগেও পাইলট প্রকল্প হয়েছে

২০১১-১২ সালে মালব্য নগর এলাকায় PPP মডেলে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। এই মডেলের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের চুক্তি সম্প্রতি শেষ হয়েছে, যা আপাতত চার মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

RWA-এর আপত্তি

দিল্লির রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ইউনাইটেড রেসিডেন্ট অফ দিল্লির সাধারণ সম্পাদক সৌরভ গান্ধী বলেছেন, বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের পর গ্রাহকদের উপর আর্থিক বোঝা বেড়েছে এবং এবার জলকে বেসরকারি হাতে দিলে সেই একই ঘটনা ঘটবে।

রাজনৈতিক দলগুলোরও বিরোধিতা

ইস্ট দিল্লি আরডব্লিউএ জয়েন্ট ফোরামের সভাপতি বিএস ভোর এবং মডেল টাউন রেসিডেন্টস সোসাইটির সভাপতি সঞ্জয় গুপ্তা সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন যে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো স্বচ্ছতা বজায় রাখে না এবং CAG অডিট এড়িয়ে যায়, তেমনই জল কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও হতে পারে।

জলের বেসরকারিকরণের ফলে গ্রাহকদের নিয়মিত জল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে একই সঙ্গে এই আশঙ্কাও রয়েছে যে শুল্ক বৃদ্ধি হতে পারে। RWA-এর বক্তব্য, এই মডেল সাধারণ মানুষের জল ব্যবহার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

Leave a comment