কোচবিহারে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলেকে গুলি করে খুনের ঘটনায় পুলিশ গত কয়েকদিনে ব্যাপক তদন্ত চালিয়েছে। ডোডেয়ারহাট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মাংস কিনতে বের হওয়া অমর রায় নামের যুব নেতাকে প্রকাশ্য দিবালোকে শুটআউট করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে, তার ওপর মোট চারটি গুলি চালানো হয়েছিল। এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তে ধরা পড়েছে একটি সুপরিশক্তিশালী স্নাইপার।
প্রথম ধাপের গ্রেফতার: বিনয় রায়
ঘটনার কয়েকদিন পরই পুন্ডিবাড়ি থানার পুলিশ অসম-বাংলা সীমান্ত থেকে বিনয় রায় নামে এক সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। বিনয়কে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে আরও কয়েকজন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এর ফলে তদন্তের পরবর্তী ধাপে অরুণাচলপ্রদেশে অভিযান চালানো হয়।
অরুণাচলপ্রদেশ থেকে দুইজনের গ্রেফতার
পুন্ডিবাড়ি থানার বিশেষ দল অরুণাচলপ্রদেশে পৌঁছে নারায়ণ বর্মন ওরফে বিশাল (২০) এবং কিশোর বর্মন ওরফে ভোগী (২৪) নামে দুই তরুণকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, খুনের সময় সুপারি কিলাররা এই মোটরবাইক ব্যবহার করে ডোডেয়ারহাটে পৌঁছেছিল।
রবিবার আরও দুইজনের গ্রেফতার
পুলিশের সর্বশেষ পদক্ষেপে শনিবার রাতে আলিপুরদুয়ার জেলার তপসিখাতা থেকে বাধন দাস (২৯) এবং মিঠুন রায় (৩৬) নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকেও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরবাইক এবং অন্যান্য প্রমাণাদি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ধারা অনুসারে, মোট গ্রেফতার সংখ্যা পাঁচে পৌঁছেছে।
পুরোনো শত্রুতার সূত্রপাত
সোমবার কোচবিহার পুলিশ লাইনে সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে পুরোনো শত্রুতার প্রভাব রয়েছে। পুলিশ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যে, আরও কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। পাশাপাশি, ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত ৯ অগাস্ট ডোডেয়ারহাটে অমর রায় তার বন্ধুদের সঙ্গে মাংস কেনার সময় প্রকাশ্য শুটআউটে নিহত হন। অমর ছিলেন ডাওয়াগুড়ি পঞ্চায়তের প্রধানের ছেলে। স্থানীয়দের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের পর চাঞ্চল্য ছড়ায়। পুলিশের কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা আগে থেকেই করা হয়েছিল।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য
বিনয় রায়কে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে উঠে আসে আরও কয়েকজনের নাম। পুলিশ তা যাচাই করতে অরুণাচলপ্রদেশে অভিযান চালায় এবং নারায়ণ ও কিশোর বর্মনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকেও খুনের সরঞ্জাম এবং প্রমাণাদি উদ্ধার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক দিকও থাকতে পারে, কারণ নিহত যুব নেতা তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
মোটরবাইক ও অস্ত্র উদ্ধার
খুনের সময় ব্যবহৃত মোটরবাইক এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মোটরবাইক খুনের সময় খলনায়কেরা ব্যবহার করেছিল। অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কিত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ সহজ হবে। পুলিশ আশা করছে, এই প্রমাণাদি ধৃতদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী মামলা গঠন করতে সাহায্য করবে।
সামাজিক প্রভাব ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
ডোডেয়ারহাটে প্রকাশ্য শুটআউটের ঘটনা স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা এলাকায় সিকিউরিটি বাড়িয়ে রাখবে। স্থানীয় প্রশাসনও জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটার সম্ভাবনা রোধে প্রহরায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চালাচ্ছে। খুনের সঙ্গে আর কারা যুক্ত থাকতে পারে, তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী দল হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ চিত্র উদঘাটন করতে চাইছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ধৃতদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী মামলা দাখিল করা সম্ভব হবে।
উপসংহার
কোচবিহারে TMC নেতার ছেলের খুনের ঘটনায় মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পুরোনো শত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মোটরবাইক ও অস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় মামলা প্রমাণভিত্তিক হবে। তদন্ত এখনো চলমান, এবং আরও কিছু ধাপের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ও সাথে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হবে।