দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের অসম্পূর্ণ অংশে নির্মাণ কাজ আবারও ধীরে চলছে। বিশেষ করে কোটা থেকে দিল্লিগামী যাত্রীদের এখনও সরাসরি প্রবেশাধিকার মিলছে না।
দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে: দেশের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অবকাঠামো প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আবারও আটকে গেছে। রাজস্থানে কোটা থেকে দিল্লির সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী মুই থেকে হারদেওগঞ্জ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার অংশের কাজ ভারী বৃষ্টিপাত ও কারিগরি কারণে ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে রাজধানী দিল্লির দিকে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের সমস্যা বেড়েছে।
বর্তমানে এই অসম্পূর্ণ অংশের কারণে লোকেদের ২৬ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগছে, যেখানে এই অংশটি সম্পূর্ণ হলে একই দূরত্ব মাত্র ১৫ মিনিটে অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
পিচ ঢালাইয়ে বৃষ্টির বাধা
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এনএইচএআই) প্রকল্প পরিচালক ভরত সিং জোডিয়া জানিয়েছেন, মুই থেকে হারদেওগঞ্জের মধ্যে রাস্তার চূড়ান্ত পিচ ঢালাই বাকি ছিল। জুন মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল, কিন্তু বর্ষাকালের কারণে এই কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে মাটি ধসে যাওয়া এবং জল জমাট বাঁধার মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে, যার ফলে পিচ ঢালাই করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
এখন এই অংশটি অক্টোবর বা নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরে কোটা, দিল্লি, জয়পুর সহ বিভিন্ন শহরের মধ্যে যান চলাচল আরও সহজ হয়ে উঠবে।
শুরু থেকেই ধীর গতিতে কাজ
দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশের কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল, কিন্তু শুরু থেকেই এটি গতি পায়নি। গত বছরও বৃষ্টির সময় মাটি বসে যাওয়া এবং জল জমাট বাঁধার মতো সমস্যার কারণে কাজ কয়েক মাস ধরে আটকে ছিল। এই অংশে প্রায় ২০টি ছোট-বড় সেতু তৈরি করা হচ্ছে, যার জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করতেই এক বছর সময় লেগেছে। এছাড়াও, বেনেশ্বর বাঁধের জলের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতু নির্মাণের কাজে আরও দেরি হয়েছে।
মুই থেকে হারদেওগঞ্জ অংশকে প্যাকেজ ১০ বলা হয়। এখানেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই ২৬ কিলোমিটার অংশে ফিনিশিং, পিচের চূড়ান্ত স্তর, সংকেত এবং রাস্তার পাশের কাজ বাকি আছে। এনএইচএআই কর্মকর্তাদের মতে, বৃষ্টি থামার পরে এটি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সম্পন্ন করা হবে, তবে এতে কমপক্ষে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্র্যাফিক ডাইভারশনের কারণে সমস্যা, যানজট লেগেই আছে
নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে সাওয়াই মাধোপুর থেকে হারদেওগঞ্জ পর্যন্ত ডাইভারশন চালু করা হয়েছে। যানবাহন চালকদের বিকল্প পথ — লাবান থেকে লালসোট মেগা হাইওয়ে হয়ে ইন্দ্রগড় এবং কুশটলার রাস্তা দিয়ে সাওয়াই মাধোপুর যেতে হচ্ছে। এই বিকল্প পথে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্র্যাফিকের কারণে বারংবার যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
লাখেরী অঞ্চলে বুধবারও আধ ঘণ্টা ধরে যানজট ছিল, যা পুলিশকে অনেক কষ্টে সরাতে হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বিকল্প পথে পর্যাপ্ত সাইন বোর্ড নেই, রাস্তার অবস্থাও ভালো নয়, যার ফলে যাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
কাজ সম্পন্ন হলে কী সুবিধা হবে?
যদি এই অসম্পূর্ণ অংশ অক্টোবর মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তাহলে কোটা থেকে দিল্লির সরাসরি সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে মুই থেকে হারদেওগঞ্জের যে পথ অতিক্রম করতে ২ ঘণ্টা লাগে, সেটি তখন মাত্র ১৫ মিনিটে সম্পন্ন করা যাবে। এর ফলে কোটা, দিল্লি, জয়পুর, সাওয়াই মাধোপুরের মতো শহরগুলি দ্রুত সংযোগের সুবিধা পাবে। এছাড়াও, ভারী যানবাহনের ট্র্যাফিক ডাইভারশনও বন্ধ হয়ে যাবে, যার ফলে মেগা হাইওয়ে এবং স্থানীয় রাস্তাগুলিতে যানজট থেকে মুক্তি মিলবে।
স্থানীয় লোকেরা ক্রমাগত এনএইচএআই এবং প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, যাতে কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং প্রতিবার বর্ষাকালে নির্মাণ কাজ যেন ব্যাহত না হয়। অনেক গ্রামবাসীর মতে, বিকল্প পথে স্কুলগামী শিশু এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাগুলিকেও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।