দিল্লির নর্দমায় ফের শ্রমিকের মৃত্যু: নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন

দিল্লির নর্দমায় ফের শ্রমিকের মৃত্যু: নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন

দিল্লিতে নর্দমা পরিষ্কার করার সময় শ্রমিকদের মৃত্যু ক্রমাগত ঘটে চলেছে। গত মঙ্গলবার অশোক বিহারে ৪০ বছর বয়সী এক শ্রমিক বিষাক্ত গ্যাসের কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়েন, একজন সহকর্মীর মৃত্যু হয় এবং তৃতীয়জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবই এর মূল কারণ।

নয়াদিল্লি: ভারতে হাতে করে মল পরিষ্কার (ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং) বা নর্দমার ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার সময় মৃত্যুর ঘটনা এখনও সাধারণ। গত মঙ্গলবার রাতে দিল্লির অশোক বিহারে ৪০ বছর বয়সী এক শ্রমিক বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার সহকর্মী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের জীবন হারান, এবং তৃতীয় শ্রমিক গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই ঘটনা কেবল একদিনের খবর নয়, বরং ভারতে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এই মারাত্মক কাজের সমস্যাকে তুলে ধরে।

মৃত্যুর খবর এবং পরিবারের যন্ত্রণা

নর্দমা পরিষ্কার করার সময় ঘটে যাওয়া মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, কিন্তু মৃতদের পরিবারের যন্ত্রণা উপেক্ষিত থেকে যায়। পূর্ব দিল্লির কোন্ডলিতে তিন বছর আগে যশদেবের মৃত্যু হয়েছিল। তার বিয়ে হয়েছিল মাত্র তিন মাস আগে এবং পরিবার এখনও ন্যায়বিচারের আশা করছে।

যশদেবের স্ত্রী স্ট্রোকের কারণে কোমায় আছেন, এবং তার বাবার অস্ত্রোপচারের খরচ পরিবারের অবস্থাকে আরও খারাপ করে দিয়েছে। ভাই সত্তে জানান যে “খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি। ৫০,০০০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু এরপর কেউ কোনো দায়িত্ব নেয়নি।” এই গল্প কেবল যশদেবের নয়, বরং হাজার হাজার শ্রমিকের, যাদের মৃত্যু প্রায়শই উপেক্ষিত হয়।

নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবে বাড়ছে বিপদ

উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ২৮ বছর বয়সী সোনুও নর্দমা পরিষ্কার করার সময় বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তিনি জানান যে শ্রমিকদের সুরক্ষা বেল্ট, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং মাস্কের মতো সরঞ্জাম দেওয়া হয়, কিন্তু অনেক সময় কাজের তাড়াহুড়ো এবং অসাবধানতার কারণে বিপদ বেড়ে যায়।

সোনু জানান যে মঙ্গলবার তাকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করতে হয়েছিল। যখন দড়ি পিছলে যাচ্ছিল এবং তিনি অজ্ঞান হতে শুরু করেন, তখন তাকে বাইরে বের করে আনাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। যদি নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকত, তবে হয়তো তার সহকর্মী অরবিন্দের জীবন বাঁচানো যেত।

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং পরিবারের উপর গুরুতর প্রভাব

নর্দমা পরিষ্কারের বিপদ কেবল মৃত্যু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে আসার কারণে শ্রমিকদের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সোনু এখন অন্তত চার মাস কাজ করতে পারবেন না। তার ছোট বাচ্চারা এবং পরিবার এই মুহূর্তে সম্পূর্ণরূপে তার উপর নির্ভরশীল।

রামসরের স্ত্রী ববিও জানিয়েছেন যে তার স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন কতটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানের ভরণপোষণ করছেন। তিনি বলেন, “আমরা কি গরিব বলে তাকে এই কাজে পাঠানো হয়েছিল?” এই প্রশ্ন লাখো গরিব শ্রমিক পরিবারের, যারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য।

আইন থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের বিপদ

ভারতে হাতে করে মল পরিষ্কার (ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং) ১৯৯৩ সাল থেকে বেআইনি এবং ২০১৩ সালে এর উপর আরও কঠোরতা আনা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই নর্দমায় পাঠানো হয় এবং তারা বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে আসেন।

জাতীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১,২৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নর্দমা পরিষ্কার করার কারণে ১,১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১.২ মিলিয়ন মানুষ এখনও এই মারাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত।

Leave a comment