বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেছেন যে ২০০৬ সালে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইয়াসিন মালিককে হাফিজ সাইদের সাথে দেখা করিয়েছিলেন। তাঁর মতে, এটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জ্ঞাতসারে হয়েছিল, যা রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও গভীর করেছে।
New Delhi: বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য একটি বড় দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন যে ২০০৬ সালে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের সন্ত্রাসী ইয়াসিন মালিককে লস্কর-ই-তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা এবং ২৬/১১ হামলার মূল হোতা হাফিজ সাইদের সাথে দেখা করিয়েছিলেন। এই প্রকাশ দেশের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে কারণ এই বৈঠকটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের জ্ঞাতসারে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত বলে জানা গেছে।
ইয়াসিন মালিকের হলফনামা
ইয়াসিন মালিক বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তিনি ২৫ আগস্ট দিল্লি হাইকোর্টে একটি হলফনামা দাখিল করেছিলেন। এই হলফনামায় তিনি প্রকাশ করেন যে ২০০৬ সালে পাকিস্তান সফরের সময় তিনি হাফিজ সাইদের সাথে দেখা করেছিলেন। এই বৈঠকটি তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছিল না, বরং ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনুরোধে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ার অংশ ছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভূমিকা

মালিকের মতে, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদকে কূটনৈতিক উপায়ে হ্রাস করা। এই গোপন শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারতের পক্ষে কিছু সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। বৈঠকের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংও মালিককে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। এই বিবৃতি এখন প্রশ্ন তোলে যে সন্ত্রাসীদের সাথে সরকারের এই ধরনের আলোচনার পদ্ধতি কি সঠিক ছিল।
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ
বিজেপি বলছে যে, যদি মালিকের দাবি সত্যি হয়, তবে এটি ইউপিএ সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা নীতির উপর গুরুতর প্রশ্ন তোলে। অমিত মালব্য বলেছেন যে এই পুরো ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয় যে ইউপিএ সরকার কেবল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির সাথে আলোচনা করায়নি, বরং পরে এই পুরো প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি এটিকে "নিরাপত্তার সাথে আপস" বলে অভিহিত করেছে।
বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ
ইয়াসিন মালিক তাঁর হলফনামায় ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগও তুলেছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু পরে সেই বৈঠককে বিকৃত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি এটিকে "চিরায়ত বিশ্বাসঘাতকতা" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিলের পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শক্তিশালী করতে এই বৈঠকের অপব্যবহার করা হয়েছে।
ফাঁসির সাজা গ্রহণ করতে প্রস্তুত মালিক
মালিক তাঁর হলফনামায় বলেছেন যে, যদি আদালত তাঁকে ফাঁসির সাজা দেয়, তবে তিনি এটি গর্ব ও সম্মানের সাথে গ্রহণ করবেন। তিনি নিজেকে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মকবুল ভাটের সাথে তুলনা করেছেন, যাকে ১৯৮৪ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। মালিক বলেছেন যে, যদি তাঁর মৃত্যুতে কেউ স্বস্তি পায়, তবে তিনি হাসিমুখে ফাঁসির মুখোমুখি হবেন।

আদালতে শুনানি চলছে
বর্তমানে দিল্লি হাইকোর্ট এনআইএর আপিলের শুনানি করছে। এনআইএ ২০১৭ সালের সন্ত্রাসী অর্থায়ন মামলায় মালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার আবেদন জানিয়েছে। আদালত মালিককে ১০ নভেম্বরের মধ্যে জবাব দাখিল করতে বলেছে।
২০২২ সালে হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২০২২ সালে ইয়াসিন মালিককে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন অর্থাৎ UAPA এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। নিম্ন আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আদালতের বক্তব্য ছিল যে, মামলাটি গুরুতর হলেও "বিরলতম শ্রেণিতে" পড়ে না, তাই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।
জে কে এল এফ-এর উপর নিষেধাজ্ঞা এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক
ইয়াসিন মালিকের দল জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জে কে এল এফ) এর উপর ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সম্প্রতি ইউএপিএ ট্রাইব্যুনাল এই নিষেধাজ্ঞাকে আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি হাফিজ সাইদ, সৈয়দ সালাউদ্দিন এবং শাব্বির শাহ-এর মতো সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে কাশ্মীরে সহিংসতা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন।











