ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম থাকার অভিযোগ ঘিরে রাজ্য প্রশাসন ও জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মধ্যে টানাপোড়েন চরমে। কমিশনের সাসপেনশন ও এফআইআর নির্দেশ না মেনে রাজ্য নিজস্ব তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা দিতেই বুধবার দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। নবান্ন সূত্রের খবর, সকালেই তিনি রওনা দেবেন এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে সরাসরি বৈঠক করবেন।
ভুয়ো ভোটারের অভিযোগে দুই ERO ও দুই AERO-কে সরাল রাজ্য
ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) ও দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO)-কে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের দাবি, এ পদক্ষেপ দ্রুত তদন্ত ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জরুরি ছিল। কিন্তু কমিশনের মতে, এই পদক্ষেপ তাদের নির্দেশের পরিপন্থী।
মুখ্যসচিবের গঠিত ৩ সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি
রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি। এতে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক সিনিয়র অফিসারকে প্রধান করে দুই অভিজ্ঞ প্রশাসক। কমিটির কাজ—অভিযোগের বিস্তারিত তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেওয়া। মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কমিশনের নির্দেশ বনাম রাজ্যের সিদ্ধান্ত
জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগেই চিঠি পাঠিয়ে চার আধিকারিককে সাসপেন্ড ও এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সেই পথে না গিয়ে নিজস্ব তদন্ত ব্যবস্থা চালু করেছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের ব্যাখ্যা—প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে অভ্যন্তরীণ তদন্ত জরুরি, তারপর প্রয়োজন হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই যুক্তি কমিশনের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়েই জল্পনা।
দিল্লিতে মুখোমুখি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত নবান্ন
নবান্ন সূত্রে খবর, বুধবার মুখ্যসচিব দিল্লি পৌঁছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেখানে রাজ্য কেন কমিশনের নির্দেশ মেনে চলেনি, তার লিখিত ও মৌখিক ব্যাখ্যা দেবেন তিনি। প্রশাসনিক মহলে আলোচনা, এই বৈঠকের ফলাফলই ঠিক করবে কমিশন রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে কিনা।
তদন্তের আওতায় ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ভূমিকা
ভুয়ো ভোটারের ঘটনা শুধু আধিকারিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। তদন্ত কমিটি আলাদা করে খতিয়ে দেখবে, ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা কি ইচ্ছাকৃতভাবে তালিকায় নাম ঢুকিয়েছে বা বাদ দিয়েছে কিনা। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্মীদের তলব করা হবে। নবান্নের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি পর্যায়ে ত্রুটি বা অনিয়ম প্রমাণিত হলে কড়া শাস্তি হবে।
কমিশনকে অবহিত করছে রাজ্য, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে
রাজ্য জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠন ও অগ্রগতির সব খবরই কমিশনকে দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই পদক্ষেপ কমিশনের নির্দেশ অমান্যের সমান। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে—ভোটার তালিকার জালিয়াতি ঢাকতে রাজ্য সময়ক্ষেপণ করছে। শাসকদল অবশ্য পাল্টা বলছে, নিরপেক্ষ তদন্তই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
রাজনীতি-প্রশাসন সংঘাতের সম্ভাবনা
ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও কমিশনের ক্ষমতার সীমারেখা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত অব্যাহত থাকলে রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে। নির্বাচনের আগে এই ধরনের টানাপোড়েন রাজনৈতিক আবহকেও প্রভাবিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী দিনের নজর: কমিশনের প্রতিক্রিয়া
এখন সব নজর কমিশনের প্রতিক্রিয়ার দিকে। মুখ্যসচিবের দিল্লি সফর ও ব্যাখ্যা যদি কমিশনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারে, তবে রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। রাজনৈতিক মহল ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি যদি শান্তভাবে মিটে না যায়, তবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে।