দেবউত্থান একাদশী ২০২৫: বিষ্ণুর জাগরণে রবি-রুচক রাজযোগ, ৪ রাশির জীবনে লক্ষ্মীর কৃপা!

দেবউত্থান একাদশী ২০২৫: বিষ্ণুর জাগরণে রবি-রুচক রাজযোগ, ৪ রাশির জীবনে লক্ষ্মীর কৃপা!

দেবউত্থান একাদশী ২০২৫ এই বছর ১লা নভেম্বর পালিত হবে। প্রায় ১৪২ দিন পর ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রা থেকে জাগবেন, যার ফলে শুভ শক্তির সঞ্চার হবে। এই দিনে রবি যোগ এবং রুচক মহাপুরুষ রাজযোগ গঠিত হচ্ছে, যা বিশেষ করে মেষ, কর্কট, বৃশ্চিক এবং কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হতে পারে।

দেবউত্থান একাদশী: এই বছর ১লা নভেম্বর পালিত হতে যাওয়া দেবউত্থান একাদশী ধর্মীয় এবং জ্যোতিষশাস্ত্রীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই অত্যন্ত বিশেষ। এই দিনে ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণু ১৪২ দিনের যোগনিদ্রা থেকে জাগবেন এবং ব্রহ্মাণ্ডে শুভ শক্তির সঞ্চার হবে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, এই দিন থেকেই চাতুর্মাস শেষ হয় এবং বিবাহ সহ সমস্ত শুভ কাজের সূচনা হয়। এইবার গঠিত রবি যোগ এবং রুচক মহাপুরুষ রাজযোগের কারণে কিছু রাশির উপর ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ কৃপা বর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দেবউত্থান একাদশীর গুরুত্ব

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, দেবউত্থান একাদশী কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয়। এটিকে দেবোত্থান একাদশী বা দেব প্রবোধিনী একাদশীও বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, আষাঢ় মাসের একাদশী তিথিতে ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় যান এবং চার মাস পর কার্তিক শুক্ল একাদশী তিথিতে জাগেন। এর সাথে চাতুর্মাসের সমাপ্তি ঘটে, যে সময় বিবাহ, গৃহপ্রবেশ এবং যজ্ঞের মতো শুভ কাজ করা হয় না। দেবউত্থান একাদশী থেকেই এই সমস্ত শুভ কাজের পুনরায় সূচনা হয়।

এই বছর দেবউত্থান একাদশীর জ্যোতিষীয় গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এই দিনে রবি যোগ এবং রুচক মহাপুরুষ রাজযোগ গঠিত হচ্ছে। এই দুটি যোগ সৌভাগ্য, সাফল্য এবং অগ্রগতির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।

শাস্ত্র মতে কী বিশ্বাস?

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, যখন ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রা থেকে জাগেন, তখন দেবী লক্ষ্মীও প্রসন্ন হন এবং সংসারে সমৃদ্ধির আশীর্বাদ দেন। তাই এই দিনে পূজা-অর্চনা, ব্রত এবং দান করলে ব্যক্তি পুণ্য লাভ করে। ভগবান বিষ্ণুর সাথে তুলসী বিবাহেরও আয়োজন এই দিনেই করা হয়, যাকে তুলসী বিবাহ বলা হয়।

দেবউত্থান একাদশীর পূজা সকালবেলা স্নান করার পর ব্রত রেখে করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমাকে জাগরিত করার জন্য 'উঠানো' বা জাগিয়ে তোলার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যেখানে শঙ্খ, ঘণ্টা এবং মন্ত্রোচ্চারণের সাথে ভগবান বিষ্ণুকে জাগানো হয়।

এই রাশিগুলির উপর বর্ষিত হবে শ্রীহরির কৃপা

১. মেষ রাশি (Aries)
দেবউত্থান একাদশীর পর মেষ রাশির জাতকদের জন্য সময়টি অত্যন্ত শুভ হতে চলেছে। এই রাশির জাতকদের আকস্মিক ধন লাভের যোগ তৈরি হচ্ছে। আটকে থাকা কাজগুলি সম্পন্ন হবে এবং জীবনে নতুন আনন্দ আসবে। পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় থাকবে এবং কর্মজীবনে ইতিবাচক ফল মিলবে। এই সময়টি আত্মবিশ্বাস এবং শক্তিতে ভরপুর থাকবে।

২. কর্কট রাশি (Cancer)
কর্কট রাশির জাতকদের জন্য ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় উন্নতি এবং অগ্রগতির ইঙ্গিত মিলছে। আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে এবং কাজে স্থিতিশীলতা আসবে। কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদস্থদের কাছ থেকে সহযোগিতা মিলবে এবং সামাজিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাবে। পারিবারিক জীবনও আনন্দময় থাকবে। এই সময়ে করা প্রচেষ্টা থেকে দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

৩. বৃশ্চিক রাশি (Scorpio)
বৃশ্চিক রাশির জাতকদের জন্য দেবউত্থান একাদশীর পরের সময়টি সৌভাগ্যশালী থাকবে। কর্মজীবনে উন্নতি, পদোন্নতি এবং মান-সম্মান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন সুযোগ মিলবে এবং বিনিয়োগ থেকে লাভ হবে। আর্থিক দিক থেকে অবস্থা মজবুত থাকবে। ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় আত্মবিশ্বাস এবং আত্মবলে বৃদ্ধি হবে।

৪. কুম্ভ রাশি (Aquarius)
কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য এই সময়টি অত্যন্ত শুভ থাকবে। আটকে থাকা কাজগুলি সম্পন্ন হবে এবং দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। কর্মজীবনে নতুন সুযোগ আসতে পারে এবং সমাজে মান-সম্মান বৃদ্ধি পাবে। দাম্পত্য জীবনে মধুরতা আসবে এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভের ইঙ্গিত রয়েছে।

এই রাশিগুলিকে সতর্ক থাকতে হবে

যেখানে কিছু রাশির উপর ভগবান বিষ্ণুর কৃপা বর্ষিত হবে, সেখানে কিছু রাশির জাতকদের সংযম বজায় রাখতে হবে। সিংহ, তুলা এবং মীন রাশির জাতকদের এই সময়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলুন এবং কোনো বিবাদ বা উত্তেজনায় জড়ানো থেকে বিরত থাকুন।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুভ কাজের সূচনা

দেবউত্থান একাদশীর দিনে ভগবান বিষ্ণুর জাগরণের সাথে সাথেই শুভ কাজের সূচনা হয়। এই দিন থেকেই বিবাহ, গৃহপ্রবেশ এবং অন্যান্য মাঙ্গলিক কাজের শুভ মুহূর্ত শুরু হয়।

এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর পূজার সাথে তুলসী বিবাহের আয়োজন বিশেষভাবে করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, তুলসী ও বিষ্ণুর বিবাহ করালে দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে।

দেবউত্থান একাদশী পূজা পদ্ধতি

  • সকালবেলা স্নান করে ব্রত পালনের সংকল্প নিন।
  • ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমাকে পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান।
  • শঙ্খ, ঘণ্টা এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে “ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ” মন্ত্র জপ করুন।
  • তুলসী পাতা, হলুদ ফুল এবং মিষ্টান্ন নিবেদন করুন।
  • সন্ধ্যাবেলায় তুলসী বিবাহের আয়োজন করুন এবং ভগবান বিষ্ণুকে জাগানোর জন্য দীপ প্রজ্জ্বলিত করুন।

জ্যোতিষীয় দৃষ্টিকোণ থেকে লাভের যোগ

দেবউত্থান একাদশীতে গঠিত রবি যোগ এবং রুচক মহাপুরুষ রাজযোগের ফলে আর্থিক স্থিতিশীলতা, কর্মজীবনে বৃদ্ধি এবং সাফল্যের যোগ তৈরি হচ্ছে। এই দিনটি নতুন কাজ শুরু করা, বিনিয়োগ বা শুভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুকূল থাকবে।

Leave a comment