ঢাকা বিমান দুর্ঘটনা: দগ্ধ শিশুদের চিকিৎসায় ভারতের সহায়তা

ঢাকা বিমান দুর্ঘটনা: দগ্ধ শিশুদের চিকিৎসায় ভারতের সহায়তা

বাংলাদেশ বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ শিশুদের চিকিৎসার জন্য ভারত দিল্লি থেকে বার্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের একটি দল ঢাকা পাঠিয়েছে। চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু।

Bangladesh Military Jet Crash: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২৫ জনই নিষ্পাপ শিশু। অনেকে গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন এবং ঢাকার হাসপাতালগুলোতে তাদের চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া (RML) এবং সফদরজং হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং বার্ন ইউনিটের প্রশিক্ষিত নার্সদের একটি দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দলটির সাথে অত্যাধুনিক মেডিকেল সরঞ্জামও পাঠানো হচ্ছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

ঢাকা বিমান দুর্ঘটনায় নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুতে দেশ শোকাহত

সোমবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ ফাইটার জেট ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এই সংঘর্ষ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, স্কুলে আগুন লেগে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জন স্কুলের শিশু। এছাড়াও, অনেক শিশু মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে, যাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। তবে, সম্পদের অভাব ও চিকিৎসার জটিলতার কারণে অনেক রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ভারতের পক্ষ থেকে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনার পরপরই গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ভারত সরকার দিল্লির দুটি প্রধান হাসপাতাল – রাম মনোহর লোহিয়া এবং সফদরজং – এর বার্ন ট্রিটমেন্ট স্পেশালিস্ট ডাক্তার এবং অভিজ্ঞ নার্সদের একটি দল ঢাকায় পাঠিয়েছে।

বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই দলটি সেখানে দগ্ধ হওয়া রোগীদের অবস্থা মূল্যায়ন করবে এবং প্রয়োজন পড়লে তাদের ভারতে এনে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতে পারে। এছাড়াও, দলটি প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম সাথে নিয়ে যাচ্ছে, যা বিশেষভাবে বার্ন কেসে ব্যবহৃত হয়।

বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞ দল নেতৃত্ব দিচ্ছে

এই মেডিকেল টিমে দুজন অভিজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন – একজন RML থেকে এবং অন্যজন সফদরজং হাসপাতাল থেকে। এর সাথে বার্ন ডিপার্টমেন্টের স্পেশালিস্ট নার্সদেরও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাদের কাজ শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া নয়, বরং রোগীদের অবস্থা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ভবিষ্যতের চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি গুরুতর

বাংলাদেশের প্রধান সংবাদপত্র 'দ্য ডেইলি স্টার'-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হতাশাজনক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ৫০০ বেডের একটি হাসপাতালে সোমবার শত শত স্বজন তাদের দগ্ধ শিশুদের খোঁজে এসেছেন। অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন।

হাসপাতালের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র রোগী, তাদের আত্মীয় এবং চিকিৎসা কর্মীদের হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সেনা জওয়ানরা গেটে মোতায়েন রয়েছে, যাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

নিষ্পাপ মাকিনের মায়ের আকুতি

একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়, যখন সালেহা নাজনীন নামে এক মা আইসিইউ-এর বাইরে দাঁড়িয়ে তার ছেলের খবরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার ছেলে আবদুর মুসাব্বির মাকিন, যে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছে। সে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছে এবং জীবনের জন্য লড়ছে।

সালেহা বারবার বলছিলেন – "দয়া করে, আমার মাকিনকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।" তার দুঃখ পুরো পরিবেশকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। এই দুর্ঘটনা কত পরিবারের জীবনে স্থায়ী কষ্ট রেখে গেছে, তা এই দৃশ্য থেকে অনুমান করা যায়।

দুর্ঘটনার তদন্ত ও প্রশ্নের মুখে বিমান

এই দুঃখজনক দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছে। যে বিমানটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি ছিল এফ-7বিজিআই, যা চীনের চেংদু জে-7 এর উন্নত সংস্করণ এবং এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-21 এর মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

Leave a comment