ধনতেরাস, দীপাবলির দু'দিন আগে পালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যার সমুদ্র মন্থনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, এই দিনেই ধন্বন্তরি দেব অমৃত কলস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই দিনে সোনা, রূপা এবং নতুন বাসন কেনা, প্রদীপ জ্বালানো, ঘর পরিষ্কার করা এবং দান করা শুভ বলে মনে করা হয়, যা স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং সুখ নিয়ে আসে।
Dhanteras 2025: এই বছর দীপাবলি ২০ অক্টোবর পালিত হবে এবং তার দু'দিন আগে যে ধনতেরাস উৎসব আসে তা সমুদ্র মন্থনের সাথে সম্পর্কিত। প্রাচীন কাহিনী অনুসারে, এই দিনেই ধন্বন্তরি দেব অমৃত কলস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভারতে ধনতেরাসের অনুষ্ঠানে লোকেরা সোনা, রূপা এবং ধাতুর বাসনপত্র কেনে, ঘর পরিষ্কার করে, প্রদীপ জ্বালায় এবং অভাবীদের দান করে। এই উৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং পরিবারে সুখ নিয়ে আসার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
দীপাবলির পৌরাণিক গুরুত্ব
দীপাবলি, অন্ধকারের উপর আলোর বিজয়ের প্রতীক, এবং এর সমুদ্র মন্থনের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। হিন্দু ধর্ম ও পুরাণ অনুসারে, প্রাচীনকালে দেবগণ ও অসুরগণ মিলে সমুদ্র মন্থন করেছিলেন, যাতে অমৃত কলস লাভ করে অমরত্বের বর পেতে পারেন। এই মন্থন থেকে অনেক দিব্য রত্ন এবং অসাধারণ বস্তু আবির্ভূত হয়েছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ধন্বন্তরি দেবের আবির্ভাব। ধন্বন্তরি দেবের হাতে অমৃত কলস ছিল এবং তাঁকে আয়ুর্বেদ ও স্বাস্থ্যের দেবতা বলে মনে করা হয়। তাঁর আবির্ভাব স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং সুখের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
ধনতেরাস এবং সমুদ্র মন্থনের সম্পর্ক
ধনতেরাস দীপাবলির দু'দিন আগে আসে এবং একে ধন ত্রয়োদশীও বলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনেই ধন্বন্তরি দেব সোনার অমৃত কলস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কারণেই এই দিনে সোনা, রূপা এবং নতুন বাসনপত্র কেনার প্রথা শুরু হয়েছিল। এটি কেবল একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, বরং ঘরে মা লক্ষ্মীর কৃপা আনা এবং পরিবারে সুখ-শান্তি বজায় রাখারও একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
ধনতেরাসের গুরুত্ব কেবল সম্পদ এবং বৈষয়িক সমৃদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এই উৎসব ঘরে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসা এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার বার্তাও দেয়। পুরাণ অনুসারে, এই দিনে করা শুভ কাজ এবং ঐতিহ্যগুলি দীর্ঘ সময় ধরে উপকারী প্রমাণিত হয়।
ধনতেরাসে যে শুভ কাজ ও ঐতিহ্যগুলি করা হয়
- সোনা, রূপা এবং ধাতুর বাসনপত্র কিনুন: ধনতেরাসের দিনে সোনা, রূপা, তামা, পিতল এবং স্টিলের বাসনপত্র কেনা শুভ বলে মনে করা হয়। এই ধাতুগুলিকে ঘরে রাখলে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয় এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই ঐতিহ্য কেবল আর্থিক সমৃদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং ঘরে স্বাস্থ্য এবং সুখ বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
- ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ধনতেরাসের দিনে ভালোভাবে ঘর পরিষ্কার করা অত্যন্ত শুভ হয়। ঘরকে সুসংগঠিত এবং পরিচ্ছন্ন রাখলে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর মা লক্ষ্মী এবং ধনের দেবীকে আকর্ষণ করে।
- প্রদীপ জ্বালানো: প্রধান দরজা, জানালা এবং ঘরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে প্রদীপ জ্বালানো ঐতিহ্যবাহী এবং শুভ বলে মনে করা হয়। প্রদীপের আলো অন্ধকার এবং নেতিবাচকতা দূর করে। এটি কেবল সাজসজ্জার অংশ নয়, বরং এটি মা লক্ষ্মী এবং ধনের দেবতা কুবেরকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতীকও।
- কুবের যন্ত্র স্থাপন করা: ধনতেরাসে ঘরে ধনের দেবতা কুবেরের যন্ত্র স্থাপন করলে আর্থিক স্থায়িত্ব এবং ধন-বৈভব বৃদ্ধি পায়। এই যন্ত্র কেবল ধন আকর্ষণ করে না, বরং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমৃদ্ধি এবং সৌহার্দ্যও বজায় রাখে।
- দান করা: অভাবগ্রস্তদের খাদ্য, বস্ত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দান করা ধনতেরাসের একটি বিশেষ পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। দান করলে কেবল সামাজিক সেবার সুযোগই মেলে না, বরং ব্যক্তির মনে সন্তুষ্টি এবং করুণার অনুভূতিও বৃদ্ধি পায়।
সমাপ্তি এবং গুরুত্ব
ধনতেরাসের উৎসব কেবল ধর্মীয় আচার বা কেনাকাটার দিন নয়। এটি স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি, সুখ এবং ইতিবাচক শক্তির প্রতীকও। সমুদ্র মন্থনের পৌরাণিক কাহিনী এবং ধন্বন্তরি দেবের আবির্ভাবের সাথে জড়িত ঐতিহ্যগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দীপাবলি কেবল আলোর উৎসব নয়, বরং জীবনে ভারসাম্য, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসার একটি উৎসব।
এই দীপাবলি, ধনতেরাসে এই ঐতিহ্য এবং উপায়গুলি অনুসরণ করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং সুখ বজায় থাকে। আপনার পরিবারের সাথে ঘরকে পরিষ্কার এবং সাজসজ্জাপূর্ণ রাখুন, প্রদীপ জ্বালান এবং অভাবগ্রস্তদের দান করুন। এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনারও একটি মাধ্যম।