নদীয়ার এক বিধবা মহিলাকে ভিডিও কলে ভয় দেখিয়ে দু’কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রথমে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় তাঁর আধার কার্ড বেআইনি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপরই এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি নিজেকে মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিডিও কল করেন। ওই কলেই মহিলাকে জানানো হয়, তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
ভুয়ো নথি দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রতারকরা মহিলার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য নানা রকম ভুয়ো নথি ব্যবহার করে। তাঁকে মুম্বাই পুলিশের লোগো, বিভিন্ন ব্যাংকের অভিযোগপত্র এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশপত্র দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, ইতিপূর্বে গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতীদের ছবিও দেখানো হয় যাতে তিনি মনে করেন সত্যিই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এই ভুয়ো প্রমাণ দেখিয়ে তাঁকে ধাপে ধাপে ভীতি প্রদর্শন করা হয়।
মুক্তির নামে টাকার দাবি
প্রতারকরা মহিলাকে ভয় দেখিয়ে জানায়, মুক্তি পেতে হলে বিশাল অঙ্কের টাকা দিতে হবে। প্রথমে তাঁকে বলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং তা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ জমা দেওয়া। এরপর ধাপে ধাপে প্রায় ২ কোটি টাকা দাবি করে প্রতারকেরা। অসহায় পরিস্থিতিতে মহিলাটি তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে একাধিক কিস্তিতে টাকা পাঠাতে থাকেন।
টাকার লেনদেনের ফাঁদে আটকে গেলেন বিধবা
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ মে থেকে ১৮ জুন-এর মধ্যে ওই বিধবা মহিলা প্রতারকদের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তিনি বুঝতেও পারেননি যে সবটাই সাজানো নাটক। প্রতারকদের নির্দেশ মতো তিনি প্রায় দুই কোটি টাকা ট্রান্সফার করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি তাঁর সন্দেহ জাগায় এবং তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের
প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে শেষমেশ তিনি কৃষ্ণনগরের সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং একাধিক সূত্র ধরে প্রতারকদের খোঁজে নামে। তদন্তে উঠে আসে এই প্রতারণা চক্র সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছিল এবং একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।
তদন্তে সাফল্য পুলিশের
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই বড়সড় সাফল্য পেয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যার সঙ্গে মূল প্রতারণা চক্রের যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে চলছে জোর তল্লাশি। তদন্তকারীরা মনে করছেন এই প্রতারণার পিছনে বড় চক্র কাজ করছে যারা ডিজিটাল জালিয়াতি করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে।
সতর্কবার্তা পুলিশের
এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের স্পষ্ট বার্তা – কোনও অচেনা ব্যক্তি ভিডিও কল করে নিজেকে পুলিশ বা সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি যাচাই করতে হবে। কোনও অবস্থাতেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য বা টাকা দেওয়া উচিত নয়। এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে সর্বদা সাইবার নিরাপত্তা নীতি মেনে চলা জরুরি।