দিলজিৎ দোসাঞ্জের 'সর্দার জি ৩'-কে পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে কাস্টিং করার জন্য সমালোচনা, অভিজিৎ ভট্টাচার্য জবাব দিয়ে বললেন- 'হিন্দুস্তান আমাদের বাপের।'
দিলজিৎ দোসাঞ্জ: দিলজিৎ দোসাঞ্জের বহুল আলোচিত পাঞ্জাবি ছবি ‘সর্দার জি ৩’ মুক্তির আগেই বিতর্কে জড়িয়েছে। এর কারণ হল ছবিতে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের কাস্টিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় যেখানে একদল দিলজিতের সমালোচনা করছে, সেখানে অভিনেতা-গায়ক তাঁর একটি লাইভ কনসার্টের সময় ট্রোলদের কড়া জবাব দিয়ে নতুন একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যা এখন আরও একটি বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি, দিলজিৎ দোসাঞ্জের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাঁকে মঞ্চ থেকে বলতে শোনা যাচ্ছে: 'যদি বিরোধীতা হয়... তবে হতে দাও, জান তো নয়। এ সব তো দোয়া, আসমান তো নয়। সবার রক্ত মিশে আছে এই মাটিতে, কারও বাপের হিন্দুস্তান তো নয়।' এই লাইনটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং দেশপ্রেম নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অভিজিৎ ভট্টাচার্য পাল্টা জবাব দিলেন
দিলজিতের এই মন্তব্যের উপর বলিউড-এর প্রবীণ গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্য কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন – 'হিন্দুস্তান আমাদের বাপের, আমাদের বাপের বাপের পূর্বপুরুষদের। এই জমি এমনি এমনি পাওয়া যায়নি, এটিকে আমাদের পূর্বপুরুষরা রক্ত জল করে সেচেছেন।'
অভিজিতের এই ভিডিওতে তাঁর হাতে তেরঙ্গা ছিল এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা’ বাজছিল। তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন – 'হিন্দুস্তান আমাদের বাপের…'
এই প্রতিক্রিয়ার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
বিতর্ক কেন?
‘সর্দার জি ৩’-এর ট্রেলারে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের উপস্থিতিই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কিছু ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন যে যখন ভারত-পাক সম্পর্ক এত সংবেদনশীল, তখন কেন কোনও পাক শিল্পীকে ভারতীয় ছবিতে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে?
এ বিষয়ে দিলজিৎ দোসাঞ্জের প্রতিক্রিয়া তাঁর 'দিল-লুমিনাটি' ট্যুরের সময় দেখা গেছে। তিনি মঞ্চে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাঁর 'কারও বাপের হিন্দুস্তান তো নয়' এই মন্তব্যটি অনেকের কাছে ভুলভাবে বোঝা গেছে এবং তাঁকে দেশবিরোধী মানসিকতার মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ইমতিয়াজ আলি সমর্থন জানালেন
ফিল্মমেকার ইমতিয়াজ আলি, যিনি দিলজিতের সঙ্গে 'অমর সিং চামকিলা'-র মতো ছবি করেছেন, তিনি এই পুরো বিষয়টিতে দিলজিতের পক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন: 'আমি দিলজিৎকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি একজন দেশপ্রেমিক। তিনি প্রতিটি শো-তে ভারতীয় পতাকা নিয়ে মঞ্চে আসেন এবং নীরবে দেশপ্রেম দেখান।'
ইমতিয়াজ আরও বলেন যে, কোনও ছবিতে শিল্পী নেওয়া কেবল অভিনেতার সিদ্ধান্ত নয়। প্রযোজক, পরিচালক এবং টিম একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ও সমর্থন
এই বিতর্ক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে #BoycottDiljit-এর মতো হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে, অন্যদিকে মানুষজন #WeStandWithDiljit-এর মাধ্যমে তাঁকে সমর্থন করছেন।
এক ব্যবহারকারী লিখেছেন: 'যদি দিলজিৎ দেশবিরোধী হতেন, তাহলে তিনি কেন প্রতিটি শো-তে তেরঙ্গা তুলতেন?'
অন্যদিকে, অন্য একজন বলেছেন: 'যতদিন পাকিস্তান সন্ত্রাস ছড়াবে, ততদিন সেখানকার শিল্পীদের এখানে জায়গা পাওয়া উচিত নয়।'
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
বলিউড বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাক বিতর্কের মধ্যে যখনই কোনও পাকিস্তানি শিল্পী ভারতীয় ছবিতে দেখা যায়, বিতর্ক অনিবার্য। তবে, এক্ষেত্রে কেবল শিল্পীকে দায়ী করাটা সঠিক নয়।
একজন প্রবীণ চলচ্চিত্র সমালোচক বলেছেন: 'চলচ্চিত্র শিল্পে কাস্টিং একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। যদি সরকার কারও উপর নিষেধাজ্ঞা না দেয়, তবে ব্যক্তিগত স্তরে বয়কটের চাপ তৈরি করা উচিত নয়।'
দিলজিতের নীরবতা আলোচনা তৈরি করেছে
দিলজিৎ দোসাঞ্জ আপাতত এই বিতর্ক নিয়ে কোনও আলাদা বিবৃতি দেননি। তাঁর কনসার্টের ভিডিওটিই এখন পর্যন্ত তাঁর একমাত্র জবাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর ভক্তরা আশা করছেন যে তিনি শীঘ্রই এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে তাঁর অবস্থান জানাবেন।
