সিঙ্গার জুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তে জানা গেছে যে তাঁকে সিঙ্গাপুরে বিষ দেওয়া হয়েছিল। ব্যান্ড সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী অভিযোগ করেছেন যে ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং ফেস্টিভ্যাল অর্গানাইজার শ্যামকানু মহন্ত জুবিনের মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে দেখানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আসাম সরকার এই মামলার তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশনও গঠন করেছে।
Zubeen Garg Death Case: বিখ্যাত গায়ক জুবিন গর্গের সিঙ্গাপুরে মৃত্যুর ঘটনায় ব্যান্ড সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং ফেস্টিভ্যাল অর্গানাইজার শ্যামকানু মহন্ত তাঁকে বিষ দিয়েছিলেন এবং মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে দেখানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন। ঘটনাটি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় ঘটেছিল। আসাম সরকার গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সাইকিয়ার নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে এই মামলার তদন্তের জন্য, যা ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
ব্যান্ড সদস্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
শেখর জ্যোতি গোস্বামীকে জুবিন গর্গের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত মামলায় পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি জানান যে জুবিনকে তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের অর্গানাইজার শ্যামকানু মহন্ত বিষ দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, গায়কের মৃত্যুকে দুর্ঘটনার রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে জুবিন গর্গের স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় গুরুতর আঘাত লাগে এবং চিকিৎসার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। শেখর অভিযোগ করেছেন যে জুবিন গর্গ একজন প্রশিক্ষিত সাঁতারু ছিলেন এবং তাঁর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। এর পিছনে তাঁর দাবি, বিষ ব্যবহার করা হয়েছিল এবং বিদেশে এই ঘটনা ঘটানোর জন্য একটি জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাস্থল এবং সন্দেহজনক আচরণ
ঘটনার সময় জুবিন গর্গ শ্বাস নিতে হাঁপাচ্ছিলেন। শেখর জানিয়েছেন যে সিদ্ধার্থ শর্মা এই সময় ‘জাবো দে, জাবো দে’ (যেতে দাও, যেতে দাও) বলতে বলতে গায়কের কোনো সাহায্য করেননি। তিনি সরাসরি নৌকার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে বিপজ্জনকভাবে নৌকা চালাতে শুরু করেন। শেখর অভিযোগ করেছেন যে নৌকার টলমলে অবস্থার কারণে গায়কের গুরুতর বিপদ হয়েছিল।
এছাড়াও জুবিনের মুখ ও নাক থেকে ফেনা বের হচ্ছিল, যাকে সিদ্ধার্থ শর্মা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলে অভিহিত করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা দিতে দেরি করেন। এই সময় অন্যরাও বিভ্রান্ত ছিলেন এবং কেউ সঠিক তথ্য পাননি।
পুলিশ ও সিআইডি তদন্ত
জুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তের জন্য আসাম পুলিশ ফেস্টিভ্যালের অর্গানাইজার, ম্যানেজার এবং ব্যান্ডের দুই সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও অমৃতপ্রভা মহন্তকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। এই মামলার তদন্তের জন্য একটি নয় সদস্যের সিআইডি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) সিঙ্গাপুরে সক্রিয় রয়েছে।
এসআইটি সূত্রে জানা গেছে, শেখরের বক্তব্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে দেখানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে জুবিন গর্গের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল এবং ঘটনাটি লুকানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বিদেশী স্থান বেছে নেওয়া হয়েছিল।
বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন
জুবিন গর্গের মৃত্যুর মামলার তদন্তের জন্য আসাম সরকার একটি এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের সভাপতিত্ব করবেন গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সাইকিয়া। আদেশে বলা হয়েছে যে কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে তার প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী কার্যালয় ৩ অক্টোবর এই আদেশের তথ্য শেয়ার করেছে।
এই ঘটনা কেবল সঙ্গীত জগতেই আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, বরং রাজনৈতিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জুবিন গর্গের মৃত্যুর পিছনে ষড়যন্ত্র এবং বিষ প্রয়োগের অভিযোগ এই মামলাটিকে গুরুতর ও সংবেদনশীল করে তুলেছে।
মামলাটি হাই প্রোফাইল হয়ে উঠেছে
জুবিন গর্গের নাম সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তাঁর ব্যান্ড সদস্যের প্রকাশ করা তথ্য এবং বিদেশী স্থানে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা এই মামলাটিকে হাই প্রোফাইল করে তুলেছে। এখন সকলের নজর বিচার বিভাগীয় কমিশন এবং সিআইডি তদন্তের দিকে।