ভারতের মাথায় ‘শুল্ক বোমা’, ট্রাম্পের হঠাৎ কড়া পদক্ষেপে কপাল পুড়ল রপ্তানিকারকদের
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের একবার ভারতের ওপর ‘অর্থনৈতিক মিসাইল’ নিক্ষেপ করলেন। ৩১ জুলাই রাতে হঠাৎ ঘোষণা করে জানালেন—১ অগাস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যে লাগু হচ্ছে ২৫% শুল্ক! এতে হিমশিম খেতে চলেছে ভারতীয় পোশাক, গয়না, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ওষুধ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি, যাদের মূল রপ্তানির বাজার আমেরিকা। এতবড় শুল্কের চাপ ভারতের পণ্যের প্রতিযোগিতা শক্তিকে কার্যত বিপন্ন করতে পারে আন্তর্জাতিক বাজারে।
মার্কিন মুলুকে বাড়বে ভারতীয় জিনিসের দাম, ঝাঁকুনি খাবে বাজার
২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক মানে আমেরিকান ক্রেতাদের জন্য ভারতীয় পণ্যের দাম প্রায় এক লাফে বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—ফলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের বিক্রি কমে যাবে, সেইসঙ্গে রপ্তানি আয়ও নিম্নমুখী হবে। ইতিমধ্যেই টাকার মান কমেছে ডলারের তুলনায়। ট্রাম্পের ঘোষণার পর টাকার আরও পতন, আর শেয়ার বাজারে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
ভারতকে ধাক্কা দিয়ে পাকিস্তানের দিকে চুক্তির হাত বাড়ালেন ট্রাম্প!
একদিকে ভারতকে ঠেলে দিলেন ‘শুল্কের খাদে’, আর অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পন্ন করলেন রীতিমতো কৌশলগত চুক্তি। সমাজমাধ্যমে নিজেই জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট—পাকিস্তানে যে বিশাল তৈল ভান্ডার আছে, তার উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করবে আমেরিকা ও পাকিস্তান। এই চুক্তি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বিরাট মাইলফলক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টারা।
সমঝোতার ‘চমক’ পাকিস্তানের সঙ্গে, ভারতের প্রতি হঠাৎ এত রাগ কেন?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে ছিল। সেই হতাশা থেকেই হোয়াইট হাউসের রোষ গিয়ে পড়েছে দিল্লির উপর। ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টা জানিয়েছেন—“ভারতের কাছ থেকে যেটুকু প্রত্যাশা ছিল, তার কিছুই পাওয়া যায়নি। তাই প্রেসিডেন্ট কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।” অনেকের মতে, এটি ট্রাম্পের ‘চাপের কৌশল’ও হতে পারে, যাতে ভারত দ্রুত সমঝোতায় রাজি হয়।
বাংলার বাজারেও টান পড়বে? শেয়ার থেকে পোশাক, সবকিছুর ওপর প্রভাব
শুধু আন্তর্জাতিক নয়, এর অভিঘাত পড়তে চলেছে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতেও। বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলির শেয়ারে ঝাঁকুনি, রপ্তানিনির্ভর সংস্থাগুলির আয় হ্রাস, বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে শেয়ার বাজারে বড়সড় ধসের আশঙ্কা। বাংলাতেও গার্মেন্টস শিল্পের উপর প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে শিল্প মহল।
‘অর্থনৈতিক চাপে’ রাজনীতি? নির্বাচনী তাস নাকি আসল অসন্তোষ?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ট্রাম্প ২০২4 সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ফের ২০২8-এর প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আর সেই পথেই তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ তাসকে আবার সামনে আনতে চাইছেন। ভারতকে শুল্ক দিয়ে চাপে ফেলে, পাকিস্তানকে চুক্তিতে রেখে তিনি রাজনৈতিকভাবে কী বার্তা দিতে চাইছেন, সেটাই এখন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে চর্চার বিষয়।
শুল্কে কোণঠাসা ভারত, কূটনীতির পরীক্ষায় মোদী সরকার
ট্রাম্পের এই কড়া পদক্ষেপ ভারতের বাণিজ্য, রাজনীতি ও কূটনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে অর্থনীতির ঝাঁকুনি, অন্যদিকে পাকিস্তানকে কৌশলগত জায়গায় তুলনায় এগিয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে মোদী সরকারের সামনে জোরালো জবাব দেওয়ার সময় এখনই। ট্রাম্পের শুল্ক ‘আক্রমণ’-এর কী জবাব দেয় দিল্লি, এখন সেদিকেই তাকিয়ে দেশ।