আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। এই বার তিনি চিনে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট স্থাপন এবং ভারত থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বুধবার আয়োজিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) সম্মেলনে নিজের পুরনো মেজাজে ট্রাম্প বলেন, এখন থেকে টেক কোম্পানিগুলোকে দেশের স্বার্থকে সবার উপরে রাখতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না।
র্যাডিক্যাল গ্লোবালিজমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ ট্রাম্পের
এআই সামিটের সময় ট্রাম্প আমেরিকার বেশ কয়েকটি বড় টেক কোম্পানির সমালোচনা করে বলেন যে তারা র্যাডিক্যাল গ্লোবালিজমের পথ বেছে নিয়েছে। এর কারণে কোটি কোটি আমেরিকান প্রতারিত এবং বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকান টেক ইন্ডাস্ট্রি এমন পথ বেছে নিয়েছে, যাতে দেশের মানুষ মনে করতে শুরু করেছে যে তাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের টেক কোম্পানিগুলো আমেরিকার স্বাধীনতার সুযোগ নিয়েছে, কিন্তু তারা তাদের প্রোডাকশন ইউনিটগুলো চিনে স্থাপন করেছে, ভারত থেকে কর্মী নিয়োগ করেছে এবং ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য আয়ারল্যান্ডের মতো দেশে মুনাফা পাঠিয়েছে। ট্রাম্পের আমেরিকায় এটা আর চলবে না।”
ভারত থেকে কর্মী নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বিশেষভাবে ভারতের উল্লেখ করে বলেন যে বড় আমেরিকান কোম্পানিগুলো বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কর্মী নিয়োগ করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন আমেরিকাতেই লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রযুক্তিগত যোগ্যতা রাখেন, তখন কেন বাইরে থেকে লোক আনা হচ্ছে। ট্রাম্পের মতে, এটা দেশের তরুণদের সঙ্গে অবিচার।
এআই-এর নামে জাতীয়তাবাদের নতুন সংজ্ঞা
এআই সামিটে ট্রাম্প আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমেরিকার পরবর্তী বড় লড়াই হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে এই প্রযুক্তির দৌড়ে জিততে হলে ‘জাতীয় আনুগত্য’ জরুরি। তিনি বলেন, “আমাদের এআই ক্ষেত্রে আমেরিকাকে গ্লোবাল লিডার বানাতে হবে এবং এর জন্য টেকনোলজি সেক্টরকে তাদের উদ্দেশ্য পরিবর্তন করতে হবে।”
ট্রাম্প টেক কোম্পানিগুলোকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে তাদের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন যে এখন সময় এসেছে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফার পেছনে না ছুটে দেশের স্বার্থকেও বুঝুক।
এআই নিয়ে তিনটি নতুন নির্দেশ
এআই সামিটে ট্রাম্প তিনটি নতুন এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেছেন। প্রথম আদেশটি হোয়াইট হাউস অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা, যা আমেরিকার এআই ক্ষমতাকে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী করবে। দ্বিতীয় আদেশটি এআই প্রযুক্তিকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করার জন্য একটি জাতীয় কৌশল তৈরি করা। এর উদ্দেশ্য হল আমেরিকায় তৈরি এআই সলিউশনগুলোকে এক্সপোর্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া।
তৃতীয় নির্দেশের অধীনে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে স্থানীয় ট্যালেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দিকে কাজ করতে বলা হয়েছে, যাতে বিদেশ থেকে কর্মীদের উপর নির্ভরতা কমানো যায়।
ট্রাম্প বললেন- টেক কোম্পানিগুলোকে আমেরিকার জন্য কাজ করতে হবে
ট্রাম্প তার পুরনো জাতীয়তাবাদী মেজাজে বলেন, “আমরা চাই আমাদের টেক কোম্পানিগুলো কেবল আমেরিকার জন্য কাজ করুক। কারখানা এখানেই তৈরি হোক, কর্মীদের নিয়োগ এখান থেকেই হোক এবং মুনাফাও আমেরিকাতেই থাকুক। এখন থেকে আমেরিকার টাকা বিদেশে যাবে না।”
তিনি বলেন যে তার সরকারের উদ্দেশ্য হল টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রিকে দেশপ্রেমের সঙ্গে যুক্ত করা। ট্রাম্পের মতে, এখন সেই যুগ শেষ হয়ে গেছে যখন কোম্পানিগুলো শুধু মুনাফার জন্য আমেরিকার মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করত।
টেক ইন্ডাস্ট্রিতে অসন্তোষের ইঙ্গিত
ট্রাম্পের বক্তব্যে যেখানে কিছু মানুষ দেশপ্রেমের বার্তা খুঁজে পেয়েছেন, সেখানে টেক ইন্ডাস্ট্রির অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে ব্যবসায়িক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনও বড় টেক কোম্পানির পক্ষ থেকে এই বিবৃতির কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে সূত্র মারফত জানা গেছে যে অনেক কোম্পানি এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
আগেও সরব হয়েছেন
এই প্রথমবার নয় যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার টেক কোম্পানি এবং তাদের গ্লোবাল অপারেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগের মেয়াদেও তিনি ক্রমাগত এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি এইচ-১বি ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা, চীন থেকে আমদানির উপর ভারী ট্যাক্স আরোপ করা এবং কোম্পানিগুলোকে আমেরিকায় ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের জন্য উৎসাহিত করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
এআই সামিটে আবারও ট্রাম্প সেই একই মেজাজ দেখিয়েছেন এবং টেকনোলজি সেক্টরকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে এখন তাদের পরিবর্তন করতে হবে। ট্রাম্পের স্পষ্ট বার্তা হল, যদি তিনি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে আমেরিকান স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।
ভবিষ্যতের কৌশল নিয়েও ইঙ্গিত
ট্রাম্প আরও বলেন যে আগামী কয়েক মাসে তিনি এআই, টেকনোলজি এবং জাতীয় সুরক্ষা সম্পর্কিত আরও বড় ঘোষণা করতে চলেছেন। তিনি বলেন যে আমেরিকাকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা সে গ্লোবালিজম থেকে সরে আসা হলেও।