সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন যে অপারেশন সিন্দুর এখনও চলছে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। তিনি প্রযুক্তির সাথে কৌশলগত দক্ষতাকেও জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন।
অপারেশন সিন্দুর: চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান শুক্রবার একটি প্রতিরক্ষা সেমিনারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে অপারেশন সিন্দুর এখনও চলছে এবং ভারতের সেনাবাহিনী যে কোনও দুঃসাহসের জবাব দেওয়ার জন্য চব্বিশ ঘন্টা প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে যুদ্ধ কেবল অস্ত্রের মাধ্যমেই হয় না, বরং এতে জ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কৌশলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অপারেশন সিন্দুর: সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে निर्णायक পদক্ষেপ
জেনারেল চৌহান বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী পহেলগাম হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে অপারেশন সিন্দুরের অধীনে সুনির্দিষ্ট এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অভিযানের সময় নয়টিরও বেশি জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এবং লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT)-এর প্রধান কমান্ড সেন্টারগুলোও ছিল।
তিনি জানান, এই অভিযানে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এই জঙ্গিরা সবাই ভারতে পুলওয়ামা (২০১৯) এবং মুম্বাই (২০০৮)-এর মতো একাধিক মারাত্মক হামলার জন্য দায়ী ছিল। ভারতের এই পাল্টা হামলার পর পাকিস্তান ৮, ৯ এবং ১০ মে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা চালায়, কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট পাল্টা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে।
প্রযুক্তি ও কৌশল: আধুনিক যুদ্ধের ভিত্তি
সিডিএস চৌহান সেমিনারে বলেন, যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে। এখন শুধু অস্ত্র নয়, বরং জ্ঞানেরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, আজকের যোদ্ধাকে তিনটি স্তরেই অর্থাৎ কৌশলগত (Tactical), परिचालन (Operational) এবং रणनीतिक (Strategic) স্তরে দক্ষ হতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, সেনাবাহিনীর শুধুমাত্র চিরাচরিত অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং তাদের প্রযুক্তিতেও দক্ষ হতে হবে।
তৃতীয় সামরিক বিপ্লব: অভিসারী যুদ্ধের ধারণা
ভাষণে সিডিএস আধুনিক যুদ্ধ системуকে "অভিসারী যুদ্ধ" (Convergent Warfare) বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি যুদ্ধের তৃতীয় যুগ, যেখানে গতিশীল (Kinetic) এবং অ-গতিশীল (Non-Kinetic) উপায়ের মিশ্রণ রয়েছে। এতে প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের যুদ্ধের উপাদানগুলোকে তৃতীয় প্রজন্মের আধুনিক পদ্ধতির সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
তাঁর মতে, এই পরিবর্তন একটি বিপ্লবের মতো, যা প্রযুক্তি এবং কৌশলকে একত্রিত করে একটি নতুন যুদ্ধের মডেল তৈরি করছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতিটি চ্যালেঞ্জের জন্য মানসিকভাবে, প্রযুক্তিগতভাবে এবং কৌশলগতভাবে প্রস্তুত থাকা।
'শস্ত্র ও শাস্ত্র'-এর ভারসাম্য জরুরি
সিডিএস চৌহান এই বিষয়টির ওপর জোর দেন যে, কোনও সেনাবাহিনীর কেবল শস্ত্র অর্থাৎ অস্ত্রের শক্তির উপর নির্ভর করা উচিত নয়। তাদের শাস্ত্র অর্থাৎ জ্ঞান, কৌশল এবং সামরিক তত্ত্বের গভীর বোঝাপড়া থাকা উচিত। তিনি বলেন, প্রাচীনকালে যোদ্ধারা তখনই প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হতেন যখন তারা যুদ্ধবিদ্যার পাশাপাশি নীতি ও কৌশলেও দক্ষ হতেন। আজও সেই একই নীতি প্রযোজ্য।
২৪ ঘণ্টার তৎপরতা
তিনি বলেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় প্রস্তুত। সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদ হোক বা সাইবার হামলার হুমকি, ভারতীয় সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম। অপারেশন সিন্দুর এর স্পষ্ট প্রমাণ যে ভারতের জবাবী কৌশল শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মাঠের মধ্যে কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়।