দুর্গাপুজোর অনুদান হাইকোর্টের ৪৮ ঘণ্টার হলফনামা ডেডলাইন

দুর্গাপুজোর অনুদান হাইকোর্টের ৪৮ ঘণ্টার হলফনামা ডেডলাইন

কলকাতা, ২৫ আগস্ট ২০২৫: এবারও দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদানকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা উঠেছে। সোমবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে আদালত জানতে চেয়েছে, যে সব পুজো কমিটি খরচের হিসাব সরবরাহ করেনি, তাদের কেন অনুদান দেওয়া হল। আদালত একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

অনুদান বৃদ্ধিতে খুশি পুজো উদ্যোক্তারা

সরকারি তরফ থেকে এবারের শারদোৎসবের জন্য পুজো কমিটিগুলির অনুদান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণার সময় জানিয়েছেন, এবার প্রতিটি পুজো কমিটি পাবেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এই অনুদান ২৫ হাজার টাকা বেশি। এই ঘোষণা পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দের সৃষ্টি করেছে।

সরকারি সুবিধা আরও বাড়ানো

শুধু অনুদানই নয়, এবার বিদ্যুৎ খরচেও ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে ফায়ার লাইসেন্স এবং অন্যান্য সরকারি ফি মকুবের সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্গাপুজোকে সহজলভ্য ও উৎসবকে আনন্দঘন করে তোলা। তবে এসব স্বীকৃতি সত্ত্বেও অনুদান বিতরণ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে।

আদালতের তীব্র প্রশ্ন

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার মামলার শুনানির সময় রাজ্যকে জানাতে বলেন, “যে পুজো কমিটিগুলি খরচের হিসাব দেয়নি, তাদের কেন অনুদান দেওয়া হচ্ছে?” আদালত চাইছে স্পষ্ট তথ্য, কোন কোন কমিটি হিসাব জমা দিয়েছে এবং কোনগুলি দেয়নি। এই তথ্য হলফনামা আকারে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে হবে।

‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জরুরি

আদালত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, ইতিপূর্বে ক্লাবগুলিকে তাদের খরচের বিবরণ ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কতটি কমিটি তা মেনে চলেছে, কতগুলি নেই—এই স্পষ্ট তথ্যের অভাবে অনুদান বিতরণের নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আদালত আগ্রহী এই তথ্য দ্রুত জানতে, যাতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

অনুদান বাতিলের সম্ভাবনা

বিচারপতি সুজয় পাল স্পষ্ট করেছেন, “যে সব ক্লাব সরকারি অনুদান নিয়ে হিসাব দিচ্ছে না, তাদের বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। প্রয়োজনে তাদের অনুদান বন্ধও করা যেতে পারে।” আদালতের এই পর্যবেক্ষণ রাজ্য সরকারের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

রাজ্যের পক্ষের ব্যাখ্যা

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানিয়েছেন, অনুদান বিতরণ নিয়ে কোনো আদালত আপত্তি তো করেনি। তাই আদালত সুপারিশ করেছেন, পুজোর পরে মামলার শুনানি হওয়া উচিত। তবে বিচারপতি পালের মত, “পুজোর পরে আর এই মামলার গুরুত্ব কমে যাবে। বারবার সঠিক হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও তা না মানা মানে প্রশাসনিক ত্রুটি রয়েছে।”

পূর্বের অনুদান হিসাবের বিশ্লেষণ

বিগত বছরগুলোতে বহু পুজো কমিটি তাদের খরচের বিবরণ জমা দেয়নি। আদালতের নজরে এসেছে, অনেকে অনুদান পেয়েও হিসাব দিচ্ছে না। এবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য সরকারের হলফনামা এই তথ্য স্পষ্ট করবে। যদি কোন কমিটি হিসাব জমা না দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

সামগ্রিক চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে একটি অনন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। অনুদান বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খরচ ছাড় এবং ফি মকুব—all একসঙ্গে পুজোকে সহজলভ্য ও আনন্দময় করতে সহায়তা করবে। তবে আদালতের কঠোর নজরদারি এবং ৪৮ ঘণ্টার হলফনামা ডেডলাইন এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার দিকে পরিচালিত করবে।

Leave a comment