ছয় গোলের ঝড় ডুরান্ডে জয়ের হ্যাটট্রিক ইস্টবেঙ্গলের

ছয় গোলের ঝড় ডুরান্ডে জয়ের হ্যাটট্রিক ইস্টবেঙ্গলের

নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও মাঠে লাল-হলুদের ঝাঁঝ ছিল চোখে পড়ার মতো। ১১ জনের মধ্যে ছয়জন আলাদা গোলদাতা—এ যেন দলগত ফুটবলের সেরা উদাহরণ। প্রতিপক্ষ ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ডুরান্ড কাপে জয়ের হ্যাটট্রিক করল ইস্টবেঙ্গল। গোলের খাতায় নাম তুললেন হামিদ আহদাদ, বিপিন সিং, আনোয়ার আলি, রশিদ, সল ক্রেস্পো ও ডেভিড।

শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে ম্যাচ, গোলকিপারের উজ্জ্বল সেভ

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই বলের দখল ও আক্রমণে আধিপত্য ইস্টবেঙ্গলের হাতে। যদিও শুরুতে এয়ারফোর্সের দুই নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন লাল-হলুদের গোলকিপার শুভজিৎ বসু। তারপরে আক্রমণের ঝড় সামলানো আর সম্ভব হয়নি প্রতিপক্ষের পক্ষে।

সপ্তম মিনিটেই হামিদের হেডে প্রথম গোল

মাঠের ডান দিক থেকে এডমুন্ডের নিখুঁত ক্রস পেয়ে হেডে গোল করেন হামিদ আহদাদ। নিখুঁত টাইমিং আর ধারালো ফিনিশিংয়ে বল গিয়ে ঠেকে প্রতিপক্ষের জালে। দর্শক আসনে তখন উৎসবের আমেজ।

বিপিন সিংয়ের দারুণ ফিনিশিংয়ে দ্বিতীয় গোল

২৬ মিনিটে থ্রু পাস থেকে বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিপক্ষ গোলকিপার ও ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করেন বিপিন সিং। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে ফিনিশিংয়ে ব্যর্থ হলেও এদিন তাঁর গোলে ফিরল আত্মবিশ্বাস।

আমন খানের হেডে এয়ারফোর্সের একমাত্র সান্ত্বনা

৩৭ মিনিটে ডান দিক থেকে আসা বল ধরে দুরন্ত হেডে গোল করেন আমন খান। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ম্যাচে ফেরার আশার আলো দেখায় এয়ারফোর্স। তবে সেই আলো বেশি সময় টিকল না।

প্রথমার্ধে দখল ৬১%, আক্রমণে এগিয়ে লাল-হলুদ

প্রথম ৪৫ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল নেয় ১৩টি শট, যার মধ্যে ৭টি টার্গেটে। বলের দখল ছিল ৬১ শতাংশ। তবে ফিনিশিংয়ের ঘাটতির কারণে গোলের সংখ্যা সীমিত থাকে দুইয়ে।

দ্বিতীয়ার্ধে বদলি কৌশলে আরও বিপজ্জনক ইস্টবেঙ্গল

কোচ অস্কার ব্রুজোর পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয়ার্ধে একাধিক বদলি খেলোয়াড় নামেন। তাতেই বাড়ে আক্রমণের তীব্রতা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন হামিদ, যদিও শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

আনোয়ার আলির হেডে তৃতীয় গোল

৬৪ মিনিটে মিগুয়েলের কর্নার থেকে দারুণ হেডে গোল করেন আনোয়ার আলি। বলের গতি ও শক্তি এমন ছিল যে বিশ্বমানের যেকোনও গোলকিপারের পক্ষে তা আটকানো কঠিন।

রশিদের দূরপাল্লার শটে চতুর্থ গোল, ইতিহাসে জায়গা পাকা

৬৮ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে রশিদের নেওয়া শট গোলকিপারসহ পাঁচজন খেলোয়াড়কে টপকে জালে জড়ায়। এই ‘গোলার শট’ দীর্ঘদিন ডুরান্ডের স্মৃতিতে থেকে যাবে।

সল ক্রেস্পোর রিবাউন্ডে পঞ্চম গোল

৮৭ মিনিটে গোলকিপারের হাত ফসকে বেরিয়ে আসা বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করেন সল ক্রেস্পো। প্রতিপক্ষের রক্ষণে তখন ক্লান্তি ও অসাবধানতা স্পষ্ট।

ডেভিডের হেডে শেষ মুহূর্তের ষষ্ঠ গোল

৯১ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ভুলে ডেভিডের হেডে আসে শেষ গোল। এভাবেই ছয় আলাদা গোলদাতার মাধ্যমে লাল-হলুদের বড় জয় সম্পূর্ণ হয়।

৮,৪০০ দর্শকের সামনে আত্মবিশ্বাসী প্রস্তুতি

মাঠে উপস্থিত প্রায় সাড়ে আট হাজার দর্শক প্রত্যক্ষ করলেন লাল-হলুদের দুরন্ত ফর্ম। এই ম্যাচ থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালের আগে দলের আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ।

মোহনবাগান সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ, প্রস্তুত লাল-হলুদ

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোয়ার্টারে প্রতিপক্ষ হতে পারে মোহনবাগান। সেটা মাথায় রেখেই এদিন খেলেছে দল। ৬৫% বলের দখল, ২৫টি শট—সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষকে ভয় ধরানোর মতোই প্রস্তুতি ইস্টবেঙ্গলের।

Leave a comment