ভারতীয় নির্বাচনী ইতিহাসে এই প্রথমবার, সুপ্রিম কোর্ট ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর পুনরায় গণনা করিয়ে তিন বছর আগের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিল। এই ঘটনাটি হরিয়ানা রাজ্যের পানিপথ জেলার বুয়ানা লাখু গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন সংক্রান্ত।
হরিয়ানা: সুপ্রিম কোর্ট তাদের তত্ত্বাবধানে ইভিএমের পুনরায় গণনা করায়। পানিপথ জেলার ইসরানা ব্লকের বুয়ানা লাখু গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচনে পূর্বে পরাজিত প্রার্থী মোহিত হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট পুনর্গণনার আবেদন খারিজ করে দেয়, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মাত্র দুই মাসের মধ্যে ইভিএম খুলে গণনা করায়, যেখানে মোহিত ৫১ ভোটে জয়ী হন। বৃহস্পতিবার ইসরানা বিডিও অফিসে তাঁকে পঞ্চায়েত প্রধান পদে শপথ গ্রহণ করানো হবে।
কীভাবে শুরু হল বিতর্ক
২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাতজন প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু মূলত লড়াই ছিল কুলদীপ সিং এবং মোহিত কুমারের মধ্যে। ভোটগণনার পর কুলদীপকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং তাঁকে জয়ী হওয়ার শংসাপত্রও দেওয়া হয়। তবে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুনর্গণনায় মোহিতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং তাঁকেও শংসাপত্র দেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে গ্রামে একই সময়ে দু'জন পঞ্চায়েত প্রধান হয়ে যান। এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, কারণ কুলদীপ হার মানতে রাজি হননি এবং আইনি লড়াই শুরু করেন।
কোথায় ভুল হয়েছিল?
তদন্তে জানা যায় যে বুথ নম্বর ৬৯-এ প্রিসাইডিং অফিসারের গুরুতর ভুলের কারণে দুই প্রার্থীর ভোট অদলবদল হয়ে গিয়েছিল। মোহিতের পাওয়া ভোট কুলদীপের অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয় এবং কুলদীপের ভোট মোহিতের অ্যাকাউন্টে। সব বুথের ভোটের যোগফলের ভিত্তিতে ভুলভাবে কুলদীপকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
যখন এই ভুল ধরা পড়ে, তখন রিটার্নিং অফিসার সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে মোহিতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, কিন্তু যেহেতু কুলদীপের কাছে আগে থেকেই শংসাপত্র ছিল, তাই তিনি তা মানতে অস্বীকার করেন।
হাইকোর্টের রায় এবং সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
কুলদীপ ১২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ পান। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই মামলায়, ১ জুন ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট পুনরায় ভোটগণনা করার আবেদন খারিজ করে কুলদীপের পক্ষেই রায় দেয়। মোহিত ১২ জুন ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ৩১ জুলাই প্রথম শুনানি হয় এবং ৭ জুলাই (শুনানির ক্রমানুসারে) সুপ্রিম কোর্ট তাদের তত্ত্বাবধানে পুনরায় গণনার আদেশ দেয়।
দেশে এই প্রথমবার, সুপ্রিম কোর্ট তাদের রেজিস্ট্রার (ওএসডি)-এর তত্ত্বাবধানে ইভিএমের পুনরায় গণনা করায়। এই পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফিও করা হয়, যাতে স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। গণনার ফলে মোহিত ১০৫১ এবং কুলদীপ ১০০০ ভোট পান, যেখানে মোহিত ৫১ ভোটে জয়ী হন। ১১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি এন. কোটিশ্বর সিং-এর বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে মোহিতকে বুয়ানা লাখুর বৈধভাবে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান ঘোষণা করেন এবং জেলা প্রশাসনকে দুই দিনের মধ্যে তাঁকে শপথ গ্রহণ করানোর নির্দেশ দেন।