ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে অনেক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট কোনো কারণ ছাড়াই সাসপেন্ড হচ্ছে, যার ফলে মানুষ ক্ষুব্ধ এবং মেটা'র এআই মডারেশন সিস্টেম নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে।
মেটা: ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী আজকাল গভীর উদ্বেগ এবং অসন্তোষের মধ্যে রয়েছেন। কারণ হল — কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি সাসপেন্ড করে দেওয়া হচ্ছে। মেটা (Meta)-র পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া জানানো হয়নি এবং মানবিক সহায়তার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাও নেই। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে সংযোগ, উপার্জন এবং মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে এখন প্রশ্ন উঠছে যে এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে ব্যবহারকারীর ডেটা এবং ডিজিটাল পরিচয় এআই-এর হাতে সুরক্ষিত কিনা?
কোনো সতর্কতা ছাড়াই অ্যাকাউন্ট ব্যান: ব্যবহারকারীদের ক্রমবর্ধমান অভিযোগ
সম্প্রতি সারা বিশ্ব থেকে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা বৃহৎ সংখ্যায় অভিযোগ করেছেন যে তাদের অ্যাকাউন্টগুলি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো ইমেল নেই, কোনো বিজ্ঞপ্তি নেই এবং কোনো সুস্পষ্ট কারণও নেই। ব্রিটনি ওয়াটসন, কানাডার একজন মহিলা, যিনি ফেসবুককে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা গোষ্ঠীগুলির সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট ৯ দিন বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, 'এটা শুধু একটা অ্যাপ ছিল না, এটা আমার জীবনের একটা অংশ ছিল।'
প্রযুক্তিগত ত্রুটি নাকি এআই-এর স্বেচ্ছাচারিতা?
মেটা স্বীকার করেছে যে সম্প্রতি কিছু ফেসবুক গ্রুপকে ভুল করে সাসপেন্ড করা হয়েছে, যা 'প্রযুক্তিগত ত্রুটি' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনাটি এর চেয়ে অনেক বড় এবং ব্যাপক। ব্যক্তিগত প্রোফাইল, ব্যবসার পেজ এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্যাম টল, ইংল্যান্ডের ২১ বছর বয়সী ব্যবহারকারী, জানিয়েছেন যে তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল কোনো সতর্কতা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং যখন তিনি আপিল করেন, তখন মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে উত্তর আসে — তাও আবার নেতিবাচক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'একজন মানুষ কি এত দ্রুত প্রোফাইলের পর্যালোচনা করতে পারে? এটা স্পষ্ট যে পুরো বিষয়টি এআই-এর হাতে রয়েছে।'
ব্যবসায় প্রভাব: ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা চিন্তিত
ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ মিশেল ডেমেলো-র মতে, তাঁর ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম উভয় অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর আয় এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি জানান, বিবিসি যখন মেটা-র সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখনই তাঁর অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'এমন একটি সংস্থা, যা কোটি কোটি ব্যবহারকারীকে পরিচালনা করে, তাদের অন্তত একটি মানবিক হেল্পলাইন বা লাইভ চ্যাট বিকল্প রাখা উচিত।'
এআই মডারেশন বনাম মানবিক বোধ: কোথায় ভুল করছে মেটা?
মেটা-র মডারেশন সিস্টেম এখন প্রায় সম্পূর্ণরূপে এআই-ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। সামান্যতম নিয়ম লঙ্ঘনেও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যখন ব্যবহারকারীরা আপিল করেন, তখন তাঁরা কোনো উত্তর পান না অথবা এআই থেকে স্বয়ংক্রিয় উত্তর পান।
এই সিস্টেমটি শুধুমাত্র অস্বচ্ছই নয়, ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল সুরক্ষা এবং মানসিক শান্তির জন্য বিপজ্জনকও হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্টেন্ট মডারেশনের ক্ষেত্রে, এআই কেবল সহায়ক হতে পারে, চূড়ান্ত নির্ধারক নয়। সিদ্ধান্তে মানবিক বোধ, প্রাসঙ্গিকতা এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন, যা বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
অনলাইন প্রতিবাদ এবং আইনি চাপ
এই ঘটনার পরে ২৫,০০০ এর বেশি ব্যবহারকারী একটি অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে মেটা-র কাছে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা দাবি করা হচ্ছে। Reddit, X (Twitter) এবং Facebook-এও ব্যবহারকারীরা তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেক গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে মেটা-র বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পরিকল্পনাও করেছে। কিছু ব্যবহারকারী #DeleteFacebook এবং #MetaBoycott-এর মতো হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করানো শুরু করেছেন, যা মেটা-র ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ব্যবহারকারীদের ৫ প্রধান দাবি
- এআই-এর সঙ্গে মানবিক মডারেশনের পুনর্বহাল
- নিয়ম লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট তথ্য এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থা
- দ্রুত এবং স্বচ্ছ আপিল প্রক্রিয়া
- ডিজিটাল ব্যবসার জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সহায়তা
- ব্যবহারকারীর ডেটা এবং স্মৃতির সুরক্ষার গ্যারান্টি