ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, পাকিস্তান-এর পরিস্থিতি না শুধরালে কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ শেষ হবে না। এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
Jammu-Kashmir: জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ আবারও তাঁর একটি মন্তব্যকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত পাকিস্তানের পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে, ততক্ষণ কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এমন এক সময়ে তিনি এই মন্তব্য করলেন যখন কেন্দ্র সরকার উপত্যকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি করছে।
পাকিস্তানের উপর দায় চাপানোর অভিযোগ
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, কাশ্মীর থেকে জঙ্গিবাদ ততক্ষণ শেষ হবে না, যতক্ষণ না পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "আমি দাবি করছি, যতক্ষণ না আমাদের প্রতিবেশী দেশ এবং সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, ততক্ষণ এখানে সন্ত্রাসবাদ কখনও শেষ হবে না।" তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে।
৫ই আগস্টের প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ফারুক আবদুল্লাহর এই মন্তব্যের পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট কেন্দ্র সরকার জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করে এবং রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রশাসন উপত্যকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে ৫৯ জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩১ জন সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ ছিল এবং ২৮ জন স্থানীয় জঙ্গি ছিল। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি শেষ হয়নি, তবে নিরাপত্তা বাহিনী ক্রমাগত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
পহেলগাম হামলা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
২২শে এপ্রিল পহেলগামে হওয়া হামলা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। এরপর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ৬টি পৃথক সংঘর্ষে ২১ জন সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করেছে। এই অপারেশন থেকে এটা স্পষ্ট যে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সম্পূর্ণভাবে সতর্ক আছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফারুক আবদুল্লাহর আগের প্রতিক্রিয়া
পহেলগাম হামলার পরেও ফারুক আবদুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। ২৪ এবং ২৫শে এপ্রিল তিনি বলেছিলেন, এই ধরনের হামলা মানবতার বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১ থেকে ৩ মে-র মধ্যে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে এই হামলার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
সিন্ধু জল চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি
ভারত সরকার কর্তৃক সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও ফারুক আবদুল্লাহ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকারের এই বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তাঁর মতে, ভারত-পাক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমেই উভয় দেশের মধ্যে একটি স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
যুদ্ধ সমাধান নয়: ফারুক আবদুল্লাহ
২৭শে মে অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আলোচনার সময় ফারুক আবদুল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তিনি বলেন, যুদ্ধ কেবল ধ্বংস ডেকে আনে এবং সাধারণ মানুষকে এর চরম মূল্য দিতে হয়। তাঁর মতে, আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়াই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে।