মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা: ভারতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার উদ্দীপনার আশা

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা: ভারতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার উদ্দীপনার আশা

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৫ সালে প্রথমবার সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পদক্ষেপে ডলারের দুর্বলতা এবং টাকার শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, শেয়ার ও বন্ড বাজারে উদ্দীপনা এবং আরবিআই-এর জন্য সুদের হার কমানোর সুযোগ তৈরি করবে। তবে, বিদেশি বিনিয়োগে হঠাৎ উত্থান-পতন ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।

Federal Reserve Year 2025: মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ২০২৫ সালে প্রথম সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বিশ্ব বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফেডের এই বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ০.২৫% কমানোর আশা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপে আমেরিকার কর্মসংস্থান উন্নতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ উভয় দিকেই প্রভাব পড়বে। ভারতে এর ইতিবাচক প্রভাব হতে পারে টাকার শক্তিশালী হওয়া, শেয়ার বাজার এবং বন্ড মার্কেটে উত্থান, এবং আরবিআই-এর জন্য সুদের হার কমানোর সুযোগ। যদিও, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা এবং বিদেশি বিনিয়োগের উপর নির্ভরতাও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ফেডের সম্ভাব্য ০.২৫ শতাংশ কমানো

সিএমই ফেডওয়াচ টুল অনুসারে, ফেডের পক্ষ থেকে ০.২৫ শতাংশ কমানোর সম্ভাবনা জানানো হচ্ছে। এই অনুমান ৩০ দিনের ফেড ফান্ডস ফিউচার প্রাইসিং-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। ফেডের দুটি লক্ষ্য রয়েছে, একদিকে মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশের স্তরে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। তবে, প্রায়শই এই দুটি লক্ষ্য একে অপরের বিপরীত দিকে কাজ করে। প্রাক্তন ফেড উপদেষ্টা ড্যানিয়েল ডি মার্টিনো বুথ বলেছেন যে এইবার অগ্রাধিকার কর্মসংস্থানের উপর থাকবে, তবে মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি উপেক্ষা করা হবে না।

সুদের হার কমার প্রধান কারণ

  • শ্রম বাজারে দুর্বলতা: সাম্প্রতিক কর্মসংস্থান প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট মাসে আমেরিকায় মাত্র ২২,০০০ নতুন চাকরি যুক্ত হয়েছে, যা গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। বেকারত্বের হার ০.১ শতাংশ বৃদ্ধিও লক্ষ্য করা গেছে। জুন ২০২৫-এ মহামারীর পর প্রথমবারের মতো কর্মসংস্থানে পতন এসেছে, যা ফেড উপেক্ষা করতে পারে না।
  • মুদ্রাস্ফীতির চাপ: ফেডের পছন্দের মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপক, ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়, এখন প্রায় ২.৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেডের ২ শতাংশ লক্ষ্যের উপরে। একইভাবে, ভোক্তা মূল্য সূচকেও (CPI) ক্রমাগত বৃদ্ধি হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হিসেবে আমেরিকান ট্যারিফকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
  • রাজনৈতিক চাপ: রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত ফেডের উপর সুদের হার কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। যদিও চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন যে ট্যারিফের কারণে ফেডকে সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ফেডের স্বায়ত্তশাসন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বর্তমানে আলোচনার বিষয়।

ভারতে সম্ভাব্য প্রভাব

ফেডের সুদের হার কমানোর প্রভাব শুধু আমেরিকাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব ভারত সহ উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলিতেও পড়বে।

  • টাকার শক্তিশালী হওয়া: ফেডের সুদের হার কমলে আমেরিকান বিনিয়োগে প্রাপ্ত রিটার্ন কমে যাবে। এর ফলে বিশ্ব বিনিয়োগকারীরা ভারতের মতো দেশগুলির দিকে ঝুঁকতে পারে। শক্তিশালী টাকার কারণে আমদানি ব্যয়বহুল হবে না এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
  • শেয়ার বাজার এবং বন্ড মার্কেটকে বল: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধন প্রবাহ বাড়লে ভারতীয় শেয়ার বাজারে তেজি দেখা যেতে পারে। অধিক তারল্যের কারণে শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। সরকারি এবং কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগও বাড়তে পারে, যা এই বাজারগুলিকে শক্তিশালী করবে।
  • আরবিআই-এর জন্য সুযোগ: ফেডের সুদের হার কমানোর ফলে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক তার আর্থিক নীতিতে পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং মূলধন প্রবাহ অনুকূলে থাকলে আরবিআইও সুদের হার কমাতে পারে। এর ফলে ভারতে ঋণ সস্তা হবে, বিনিয়োগ ও ভোগকে উদ্দীপনা দেবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে গতি দেবে।

ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ

বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা: যদি বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে বা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে, তাহলে ডলারের শক্তিশালী ভাব বজায় থাকতে পারে। এর ফলে ভারতকে বিদেশি মূলধন প্রবাহে উত্থান-পতনের সম্মুখীন হতে হতে পারে, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

বিদেশি বিনিয়োগের উপর নির্ভরতা: যদি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু কম সুদের হারের কারণে ভারতে বিনিয়োগ করে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি বদলালে তারা তাদের পুঁজি ফিরিয়ে নিতে পারে। এটি ভারতের আর্থিক বাজারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

Leave a comment