গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান। মিশর সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন যে হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ না করে তবে তাদের বাধ্য করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকা এখন শান্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
গাজা যুদ্ধবিরতি: ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ আপাতত থেমে গেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এবং শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশরে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনের পর হামাসকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ না করে তবে তাদের তা করতে বাধ্য করা হবে।
ট্রাম্পের স্পষ্ট সতর্কতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে আমেরিকা শান্তির সমর্থন করে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদকে সহ্য করবে না। তিনি সরাসরি বলেছেন যে “হামাসকে এখন অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। যদি তারা তা না করে, তবে আমরা তাদের তা করতে বাধ্য করব। তাড়াতাড়ি হোক বা দেরিতে, কিন্তু এটা ঘটবে।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন যে তিনি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এই বার্তা হামাসের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি হামাসকে বলেছি যে আপনারা অস্ত্র ত্যাগ করবেন তো? এবং তারা বলেছে, ‘হ্যাঁ স্যার, আমরা অস্ত্র ত্যাগ করব।’ যদি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তবে পরিণতি গুরুতর হবে।”
গাজা শান্তি সম্মেলনের পর বড় বিবৃতি
ট্রাম্প মিশরে আয়োজিত গাজা শান্তি সম্মেলনের পর এই বিবৃতি দিয়েছেন। এই সম্মেলনে মিশর, জর্ডান এবং জাতিসংঘ (United Nations) সহ বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল গাজায় শান্তি পুনরুদ্ধার করা এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত নাগরিকদের পুনর্বাসনের (rehabilitation) দিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া।
যুদ্ধবিরতির প্রথম সাফল্য কিন্তু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান
শুক্রবার কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির অধীনে হামাস ২০ জন জীবিত বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়াও, সোমবার তারা ৪ জন মৃত বন্দীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে। এই পদক্ষেপ চুক্তির প্রথম পর্যায়ের অংশ। কিন্তু গাজায় পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ।
আমেরিকা কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের নিরস্ত্রীকরণ (disarmament) অন্যতম প্রধান শর্ত। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে স্থায়ী শান্তি (permanent peace) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজা শান্তি চুক্তি সত্ত্বেও অনেক সমস্যা এখনও অমীমাংসিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার শাসনের ভবিষ্যৎ। ফিলিস্তিনকে (Palestine) কি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে? ইসরায়েল কি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
ট্রাম্পের শান্তি নীতি নাকি কৌশলগত চাপ?
ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান হামাসের প্রতি বরাবরই কঠোর ছিল। তিনি তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন যে আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক অভিযানকে (global campaign against terrorism) এগিয়ে নিয়ে যাবে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য কোনো স্থান নেই। যদি হামাস তাদের অস্ত্র ত্যাগ না করে, তবে তাদের আমেরিকার শক্তির মোকাবিলা করতে হবে।”
কীভাবে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল?
হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে এই সংঘাত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হয়েছিল, যখন হামাসের জঙ্গিরা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
উভয় পক্ষের এই লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ৬৭,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা গেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন।