আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা: 'অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা ঢাকতে সংঘাত উসকাচ্ছে পাকিস্তান', অভিযোগ কাবুলের

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা: 'অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা ঢাকতে সংঘাত উসকাচ্ছে পাকিস্তান', অভিযোগ কাবুলের

আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, দেশটি তার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে সীমান্তে সংঘাত উসকে দিচ্ছে। ডুরান্ড রেখায় দুই দেশের মধ্যে গুলি বিনিময় বেড়েছে। আফগান সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে যে, যেকোনো হামলার দ্বিগুণ জবাব দেওয়া হবে।

পাক-আফগান সংঘাত: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে (Pak-Afghan Border) আবারও উত্তেজনা চরমে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ও বাগ্‌যুদ্ধ পরিস্থিতিকে গুরুতর করে তুলেছে। আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, দেশটি তার অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা ও বিশৃঙ্খলা থেকে জনগণের মনোযোগ সরাতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক রাজনীতি করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা কাবুলে সন্ত্রাসী আস্তানায় বিমান হামলা চালিয়েছে।

আফগানিস্তান সরকার পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে যে, তারা যেন ডুরান্ড রেখায় (Durand Line) উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা না করে, অন্যথায় এর ফল পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুতর হতে পারে। আফগান পক্ষের দাবি, এই সাম্প্রতিক সংঘাতে তাদের পাল্টা হামলায় ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে এবং ২৫টি চৌকিতে আফগান বাহিনী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

আফগান সরকারের অভিযোগ – ‘পাকিস্তান তার ব্যর্থতা লুকানোর চেষ্টা করছে’

আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাত (Islamic Emirate of Afghanistan)-এর প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ পাকিস্তানের ওপর সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন যে, পাকিস্তান আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে গত কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশটি উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু এই অগ্রগতি পাকিস্তানকে মানাচ্ছে না।”

জাবিহুল্লাহর মতে, পাকিস্তান তার দেশের খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক সংকট এবং সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত ব্যর্থতাগুলো লুকানোর চেষ্টা করছে। এই কারণেই তারা আফগানিস্তানের ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন যে, আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সতর্ক রয়েছে এবং যদি পাকিস্তান সীমান্তে কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

ডুরান্ড রেখায় উত্তেজনা বৃদ্ধি

ডুরান্ড রেখা, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসাবে বিবেচিত, আবারও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এই রেখা দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কের বিষয়। আফগানিস্তান এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই স্বীকার করে না, অথচ পাকিস্তান এটিকে তাদের আনুষ্ঠানিক সীমান্ত বলে মনে করে।

এই বিতর্কিত সীমান্তে গত কয়েক মাসে গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান দাবি করেছে যে, আফগানিস্তানের দিক থেকে কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের সীমানায় অনুপ্রবেশ করছে, যা প্রতিরোধের জন্য বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে, আফগানিস্তান এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে এবং এটিকে “আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে।

কাবুলে বিমান হামলা 

শুক্রবার রাতে পাকিস্তান কাবুলের আশপাশের কিছু এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান বলেছিল যে, এই হামলা সেসব সন্ত্রাসী আস্তানায় করা হয়েছিল যারা তাদের বিরুদ্ধে হামলার ষড়যন্ত্র করছিল। কিন্তু আফগানিস্তান এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে, পাকিস্তান নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

আফগান সেনাবাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সীমান্তে পাল্টা হামলা চালায়। আফগান সরকারের দাবি, এই সংঘাতে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে এবং ২৫টি পাকিস্তানি চৌকি দখল করা হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মাত্র ২৩ জন সেনার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আফগানিস্তানের সতর্কতা – ‘আমরা চুপ করে থাকব না’

আফগান সরকার পাকিস্তানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে, যদি সীমান্ত পার থেকে কোনো হামলার চেষ্টা হয়, তাহলে আফগান বাহিনী দ্বিগুণ জবাব দেবে। জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) রক্ষার জন্য যেকোনো সীমা পর্যন্ত যেতে পারি। পাকিস্তান যেন ভুলে না যায় যে এখন আফগানিস্তান দুর্বল নয়।”

তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বুঝতে হবে যে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ তাদের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনবে। “আমাদের দেশে এখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ, এবং আমরা কোনো বহিরাগত শক্তিকে আমাদের সীমান্ত লঙ্ঘন করতে দেব না।”

পাকিস্তানের জবাব – ‘আমরা নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পুরো বিষয়ে বলেছে যে, তাদের পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা (National Security) বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আফগান সীমান্তের কিছু অংশে সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে যা পাকিস্তানের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। তাই নিরাপত্তার খাতিরে এই বিমান হামলা জরুরি ছিল।

Leave a comment