জার্মানি ট্রাম্পের ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েডফুল ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান অংশীদার হিসাবে অভিহিত করে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার কথা বলেছেন। আমেরিকা-ভারত সম্পর্কে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা নীতি: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। নতুন জোট গঠিত হচ্ছে, পুরনো অংশীদারিত্ব ভেঙে পড়ছে এবং এরই মাঝে জার্মানি ভারতের সাথে তার সম্পর্ক আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্পকে কড়া বার্তা দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ডেভিড ওয়েডফুল স্পষ্ট করে বলেছেন যে ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নই ওঠে না।
ভারতের পক্ষে জার্মানির বড় বিবৃতি
ভারত সফরে আসা জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েডফুল বলেছেন যে ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি প্রধান অংশীদার এবং আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ইতিমধ্যেই গভীর। তিনি আরও যোগ করেন যে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রসারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা ভারতের সাথে মিলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করব।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
জার্মানি এই বিষয়টি তুলে ধরেছে যে ভারত কেবল এশিয়া নয়, সমগ্র বিশ্বের ভূ-রাজনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। ওয়েডফুল বলেছেন যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের কণ্ঠস্বর শোনা যায় এবং এই শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গঠনে এটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করছে। তিনি তার সফরের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছেন - ব্যাঙ্গালোর এবং নতুন দিল্লিতে আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়া।
হোয়াইট হাউসের আবেদনের উপর জার্মানির কড়া জবাব
ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয় দেশগুলোকে আবেদন করেছিল যে তারা ভারতের উপরও একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক যা আমেরিকা করেছে। এর মধ্যে ইউরোপকে ভারত থেকে তেল ও গ্যাসের কেনাকাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করার চাহিদাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু জার্মানি এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
ওয়েডফুল বলেছেন যে আমরা নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে একসাথে টিকিয়ে রাখতে চাই এবং ভারত এই প্রচেষ্টায় আমাদের স্বাভাবিক অংশীদার। এই কারণেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
ট্রাম্পের অভিযোগ এবং ভারতের কঠোর আপত্তি
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। আমেরিকার মতে, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার অর্থনীতিকে সমর্থন করে এবং যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে।
কিন্তু ভারত এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ভারত পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রশ্ন করেছে যে চীন এবং ইউরোপও রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে, কিন্তু তাদের উপর কেন কোনো শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ভারত ৫০% শুল্ক নিয়ে আমেরিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
ইউরোপের দ্বৈত মান উন্মোচিত
ভারত স্পষ্ট বলেছে যে পশ্চিমা দেশগুলো দ্বৈত মান গ্রহণ করছে। একদিকে তারা চীন ও ইউরোপকে রাশিয়া থেকে তেল কিনতে দিচ্ছে, অন্যদিকে ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিচ্ছে। এই মনোভাব কেবল ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে প্রভাবিত করে না, বরং বিশ্ব রাজনীতিতেও ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।
জার্মানি-ভারত অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়
জার্মানির এই বিবৃতি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ইউরোপ এখন আমেরিকার প্রতিটি দাবি অন্ধভাবে মেনে নেবে না। জার্মানি ভারতকে প্রধান কৌশলগত অংশীদার হিসাবে অভিহিত করে বলেছে যে আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ফ্রন্টে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করব।
ট্রাম্পের নীতির উপর ইউরোপে মতবিরোধ
সূত্র মতে, হোয়াইট হাউসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে কিছু ইউরোপীয় নেতা জনসমক্ষে ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন, কিন্তু গোপনে তারা আমেরিকার কৌশলকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনের পর থেকে এই মতবিরোধ আরও গভীর হয়েছে।