২৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে সামান্য পতন দেখা গেছে। সকাল ৮টায় স্পট গোল্ড ০.১ শতাংশ কমে ৩৩১২.০৭ ডলার প্রতি আউন্স হয়েছে। একই সময়ে, ব্লুমবার্গ ডলার স্পট ইনডেক্সে আগের সেশনে ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা যায় এবং এখন এটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এতে স্পষ্ট যে ডলারের দৃঢ়তা সোনার চাহিদার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
ডলার শক্তিশালী, ইউরো দুর্বল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নতুন শুল্ক চুক্তির পর আমেরিকান ডলারের দৃঢ়তা দেখা গেছে। এই বছর প্রথমবারের মতো ডলারের এত দ্রুত বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অন্যদিকে, ইউরোর উপর চাপ রয়েছে কারণ ইউরোপীয় রপ্তানির উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপের খবরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা আবারও দেখা দিয়েছে। এই কারণে ইউরো দুর্বল হয়েছে, যার প্রভাবও সোনার উপর পড়েছে।
আমেরিকা-চীন বৈঠক কেন্দ্রবিন্দু
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন স্টকহোমে অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বৈঠকে নিবদ্ধ। এই বৈঠক নিয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লটনিক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আগের বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি আরও ৯০ দিন বাড়ানো হতে পারে। তবে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১ আগস্টের শুল্কের সময়সীমাও দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। এর ফলে বাজারে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
চাপে সোনার चमक
উল্লেখযোগ্য যে এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সোনার দামে এক চতুর্থাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। এপ্রিল মাসে এটি ৩,৫০০ ডলার প্রতি আউন্স ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা একটি রেকর্ড স্তর। এর পর থেকে সোনা একটি সীমিত পরিসরে লেনদেন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতি, শুল্ক চুক্তি এবং মুদ্রাস্ফীতির ভয়ের কারণে বিনিয়োগকারীরা আবারও সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন। কিন্তু ডলারের দৃঢ়তা বর্তমানে এতে বাধা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকটও চাহিদা বাড়িয়েছিল
এই বছর বিশ্বব্যাপী অনেক ভূ-রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাও সোনার চাহিদা বাড়িয়েছে। এই কারণে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক ইক্যুইটি মার্কেট থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ সম্পদে (সেফ হ্যাভেন অ্যাসেটস) দিকে গেছে, যেখানে সোনা প্রধান ছিল। তবে বর্তমানে ডলারে উল্লম্ফন এবং আমেরিকা-চীনের সম্ভাব্য চুক্তির কারণে সোনার গতিতে প্রভাব পড়েছে।
রূপা, প্ল্যাটিনাম এবং প্যালাডিয়ামের অবস্থা
যেখানে সোনার দাম কমেছে, সেখানে রূপার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সকালের লেনদেনে রূপার দামে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। অন্যদিকে প্ল্যাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামে সামান্য বৃদ্ধি হয়েছে। এর প্রধান কারণ হল অটোমোবাইল শিল্পে এই ধাতুগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি।
বিশ্বজুড়ে বাজারগুলোতে সতর্কতার আবহাওয়া
বৈশ্বিক বাজারগুলোতে আজকাল সতর্কতার আবহাওয়া বিরাজ করছে। আমেরিকার শুল্ক নীতি, ইউরোপীয় রপ্তানি শুল্ক, চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা – এই সব কারণ একসঙ্গে মিলিত হয়ে বাজারকে অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে সোনাও এক প্রকার উত্থান-পতনের মধ্যে আটকে আছে বলে মনে হচ্ছে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের নজর আগামী পদক্ষেপের দিকে
বাজার বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে আমেরিকা-চীন বৈঠক, ট্রাম্পের আসন্ন ঘোষণা এবং ডলারের গতির উপর কড়া নজর রাখছেন। যদি ডলারের দৃঢ়তা আরও বাড়তে থাকে, তাহলে সোনার দাম আরও কমতে পারে। তবে, যেকোনো ধরনের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা হঠাৎ করে সোনার চাহিদা আবার বাড়িয়ে দিতে পারে।
মে মাসের পর সবচেয়ে বড় ডলার উল্লম্ফন
ব্লুমবার্গ ডেটা অনুসারে, মে মাসের পর থেকে আমেরিকান ডলারে এটি সবচেয়ে বড় উত্থান। এটি ইঙ্গিত করে যে আমেরিকার অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্ব সংকটের মধ্যেও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সফল হয়েছে। কিন্তু এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে সোনার ট্রেডিং সার্কেলের উপর। ডলার যত শক্তিশালী হয়, ডলারে সোনা তত महंगा হয়, ফলে তার চাহিদা কমে যায়।
আগত দিনের দিকে নজর
এখন বাজারের নজর ১ আগস্টের শুল্কের সময়সীমার দিকে। যদি আমেরিকা কোনো নতুন শুল্ক আরোপ করে বা চীনের সঙ্গে চুক্তি স্থগিত হয়, তাহলে এর প্রভাব আবার সোনার দামে দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে, যদি বিশ্ব স্থিতিশীল থাকে, তাহলে সোনা একটি সীমিত পরিসরে লেনদেন করতে পারে।