সোনার দামে উল্লম্ফন: ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের প্রভাব

সোনার দামে উল্লম্ফন: ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের প্রভাব

৩০শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে সোনার দামে আবারও উল্লম্ফন দেখা গেল। দিনের শুরুতে সোনার দামে তেমন কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের নজর এখন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের দু'দিনের বৈঠক এবং তার নীতিগুলির দিকে, যার সরাসরি প্রভাব সোনার গতির উপর দেখা যাচ্ছে।

লেনদেনের শুরুতে স্পট গোল্ড প্রায় ৩,৩২৯.১৯ ডলার প্রতি আউন্স-এর কাছাকাছি স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু বিদেশি সংকেত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই দাম উপরের দিকে বাড়তে থাকে। COMEX-এও গোল্ড ০.১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩,৩২৮.৪০ ডলার প্রতি আউন্স-এ পৌঁছয়।

ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠকের আগে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা, সোনার উপর দেখা গেল প্রভাব

আমেরিকার সেন্ট্রাল ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের দু'দিনের বৈঠক এই সপ্তাহে চলছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন যে ব্যাংক এই বৈঠকে সুদের হার নিয়ে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবে না। কিন্তু পরবর্তীতে কী হবে, তা বিবৃতির উপর নির্ভর করবে। তাই বিনিয়োগকারীরা আপাতত বড় চুক্তি করা থেকে বিরত থাকছেন।

এই সতর্কতার প্রভাব সোনার দামে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাজারে চাঞ্চল্য থাকলেও, কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এটাই কারণ যে প্রথমে সোনা স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু গ্লোবাল মার্কেট থেকে সামান্য ইঙ্গিত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোনা উপরের দিকে ছুটতে শুরু করে।

ডলারের দৃঢ়তা সত্ত্বেও সোনার ধরে রাখা

আমেরিকান ডলার এই মুহূর্তে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে, যা সাধারণত সোনার জন্য নেতিবাচক বলে মনে করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সোনা দৃঢ়তা দেখিয়েছে। এর কারণ হল বাজারের ধারণা যে আগামী দিনে সুদের হার কমতে পারে, যার ফলে সোনার চাহিদা আবার বাড়তে পারে।

ডলার শক্তিশালী থাকা সত্ত্বেও যদি সোনা মহার্ঘ হয়, তাহলে এর সরাসরি অর্থ হল বাজার এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধান করছে এবং সোনা সব সময়ই এমন একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

আমেরিকা-চীন আলোচনায় স্বস্তি, কিন্তু ট্রাম্পের হুমকিতে বাড়ল চিন্তা

স্টকহোমে আমেরিকা ও চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক কিছু স্বস্তি এনেছে। দুই দেশ ৯০ দিনের শুল্ক যুদ্ধবিরতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এখানেও বিষয়টি পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, এবং তিনি যদি ১২ই আগস্টের পর আবার শুল্ক প্রয়োগ করেন, তবে বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

ট্রাম্প মঙ্গলবার রাশিয়াকেও সতর্ক করে দিয়েছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে যদি কোনও উন্নতি না হয়, তবে ১০ দিন পর শুল্ক এবং অন্যান্য কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই ধরনের হুমকিতে বাজারে অস্থিরতা বেড়েছে এবং এর প্রভাব সোনার চাহিদার উপরও পড়েছে।

আইএমএফ-এর অনুমান, বিশ্বব্যাপী চাহিদা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শক্তিশালী

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫ এবং ২০২৬ সালের জন্য তাদের বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বাভাস সামান্য বাড়িয়েছে। আইএমএফ-এর মতে, শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা এবং বাজারে শক্তিশালী চাহিদা গ্লোবাল গ্রোথকে সহায়তা করেছে।

আইএমএফ আরও জানিয়েছে যে কার্যকর শুল্কের হার কমতে পারে, যা আগে ছিল ২৪.৪ শতাংশ এবং এখন ১৭.৩ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিবৃতি বাজারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, কিন্তু যতক্ষণ না নীতি স্পষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা বজায় থাকবে।

অন্যান্য ধাতুগুলির অবস্থা – রুপো ও প্ল্যাটিনামের গতি কেমন ছিল

যেখানে সোনার দামে বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুগুলির অবস্থা মিশ্র ছিল। স্পট সিলভার ৩৮.২০ ডলার প্রতি আউন্স-এ স্থিতিশীল ছিল, যেখানে COMEX-এ রুপো ০.০৬ শতাংশ বেড়ে ৩৮.৩১ ডলার প্রতি আউন্স-এ পৌঁছেছে।

প্ল্যাটিনামের দাম ০.৪ শতাংশ কমে ১,৩৮৯.২০ ডলার প্রতি আউন্স-এ দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, প্যালাডিয়ামের দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি এবং এটি ১,২৫৮.৭৫ ডলার প্রতি আউন্স-এ স্থিতিশীল ছিল।

ভারতীয় বাজারের উপর কী প্রভাব পড়েছে?

ভারতে সোনার দামে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। বড় শহরগুলিতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে কয়েক টাকা বেড়েছে। তবে মার্কিন বাজারের নীতি এবং ডলার ইনডেক্সের মুভমেন্টের পর আগামী দিনে এখানেও বৃদ্ধি বা পতন দেখা যেতে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন যে উৎসবের মরসুম আসছে, তাই সোনার চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়বে। তবে আপাতত আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের কারণে বাজার কিছুটা ধীর গতিতে চলছে।

Leave a comment