সোনার দামে আবারও বড় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। সোমবার, মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (MCX)-এ সোনা সর্বকালের সর্বোচ্চ শিখর ১,০১,২১০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামে পৌঁছেছে। এই দামটি অগাস্ট মাসের ফিউচার কন্ট্র্যাক্টের। একই সময়ে, আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বললে, COMEX-এ সোনা ৩,৪৩০ ডলার প্রতি আউন্স পর্যন্ত ট্রেড করতে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিক এই तेजीের পেছনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকাতে প্রকাশিত দুর্বল অর্থনৈতিক ডেটার কারণে সেখানে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃক সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বেড়েছে। এছাড়াও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত নতুন শুল্ক বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে, যার ফলে দাম ক্রমাগত বাড়ছে।
দিওয়ালী পর্যন্ত দাম আরও বাড়তে পারে
ফিনান্সিয়াল রিসার্চ এজেন্সি এমকে গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিশ্লেষক রিয়া সিংয়ের মতে, আগামী মাসগুলোতে বিশেষ করে দিওয়ালীর সময় ভারতে সোনা ও রূপার দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি একটি রিপোর্টে জানিয়েছেন যে, বিশ্বব্যাপী চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন এবং এর সরাসরি প্রভাব সোনার উপর পড়ছে।
রিয়া সিংয়ের মতে, দিওয়ালীর আশেপাশে সোনা ১,১০,০০০ থেকে ১,১২,০০০ টাকা প্রতি ১০ গ্রামের মধ্যে পৌঁছতে পারে। একই সময়ে, রূপা ১,২০,০০০ থেকে ১,২৫,০০০ টাকা প্রতি কিলো পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎসবের চাহিদার উপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে দিওয়ালী ও ধনতেরাসের মতো উৎসবে সোনা ও রূপা প্রচুর পরিমাণে কেনা হয়। কিন্তু এইবার দাম বেশি হওয়ার কারণে গয়নার চাহিদা কমতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা চড়া দামের কারণে কিছুটা সতর্ক হতে পারেন।
তবে, ৯ ক্যারেট এবং হালকা ওজনের গয়নার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়তে পারে। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক হলমার্কিংয়ের পরিবর্তনের ফলে এখন হালকা কিন্তু স্টাইলিশ গয়নার দিকে ঝোঁক দেখা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক কেনাকাটা
গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনার ব্যাপক কেনাকাটা করেছে। তুরস্ক, কাজাখস্তান, ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে সোনার অংশ বাড়িয়েছে। এতে সোনার দামে স্থায়ী উন্নতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
চীনে রিয়েল এস্টেট সংকট তৈরি হওয়ায় সেখানকার বিনিয়োগকারীরা রিয়েল এস্টেটের পরিবর্তে গোল্ড ইটিএফ এবং ফিজিক্যাল গোল্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছে। এতেও আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা বেড়েছে।
কেন বাড়ছে সোনার দাম
গত কয়েক বছরে সোনার দামে দারুণ উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ছয় বছরে সোনার দাম প্রায় ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মহামারীর পরের অনিশ্চয়তা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক কেনাকাটা অন্যতম।
২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার সম্পত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এর ফলে অনেক দেশ ডলার ভিত্তিক রিজার্ভের পরিবর্তে সোনা জমা করতে শুরু করে। এটিকে একটি নিরাপদ ও কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দেখা যেতে থাকে।
সোনা কেনা এখন বিনিয়োগের অংশ
আগে যেখানে ভারতে সোনা মূলত গয়না হিসেবে কেনা হত, এখন মানুষ এটিকে বিনিয়োগ হিসেবেও দেখতে শুরু করেছে। গোল্ড ইটিএফ, সা sovereign গোল্ড বন্ড এবং ডিজিটাল গোল্ডের মতো বিকল্প থাকার কারণে এখন মানুষ সোনাকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করছে। এতে চাহিদা ক্রমাগত বজায় রয়েছে, দাম যতই বেশি হোক না কেন।
সোনার দাম সম্পূর্ণরূপে বিশ্ব অর্থনীতির সূচক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল। আমেরিকাতে সুদের হার নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী বৈঠক, চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ইউরোপে চলমান অর্থনৈতিক নীতিগুলো এই দামের দিক নির্ধারণ করবে।