সেপ্টেম্বরে সোনার দাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোথায় থামবে দর?

সেপ্টেম্বরে সোনার দাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোথায় থামবে দর?

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সূচক ও ভূ-রাজনীতি নজরকাড়া প্রভাব ফেলছে:

বিশ্বের অর্থনীতির নানা সূচক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনশীলতার কারণে সেপ্টেম্বর মাসে সোনার দামে সম্ভাব্য পরিবর্তনের সংকেত দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, মার্কিন আবাসন খাতের সংখ্যা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোজোনের ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) এবং গুরুত্বপূর্ণ অস্থায়ী উৎপাদন/পরিষেবা PMI তথ্যকে নজরে রাখা হচ্ছে। তাছাড়া ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড এবং জ্যাকসন হোল সিম্পোজিয়ামে ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তৃতাও বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়ছে। এসব তথ্য সোনার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে, কারণ বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনায় বিনিয়োগের সুযোগ এবং ঝুঁকি বোঝেন।

জেএম ফিনান্সিয়ালের প্রণব মেরের পূর্বাভাস:

জেএম ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের কমোডিটি ও কারেন্সি রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রণব মের বলেছেন, "আগামী সপ্তাহে সোনার দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। মনোযোগ এখন মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সিদ্ধান্তের দিকে। মার্কিন আবাসন সংখ্যা, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের CPI এবং অস্থায়ী PMI তথ্য সোনার বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।" মের উল্লেখ করেছেন যে, ওয়াশিংটন এবং বেইজিং-এর মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা আরও ৯০ দিনের জন্য সম্প্রসারণের পর নিরাপদ সম্পদের চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

মার্কিন অর্থনীতির প্রভাব ও ফেড কর্মকর্তাদের দ্বিধা:

মেরের মতে, মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য কিছুটা দুর্বল হওয়ায় মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ফেড কর্মকর্তারা সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে দ্বিধায় পড়েছেন। এর প্রভাব সরাসরি কমেক্স সোনার ফিউচারে পড়েছে। শনিবার নিউ ইয়র্কে ডিসেম্বরের চুক্তির জন্য কমেক্স সোনার দাম প্রতি আউন্স ৩,৩৮২.৬০ মার্কিন ডলারে নেমেছে। এটি দেখাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা ও সরবরাহ উভয়ের ভারসাম্য খুব সংবেদনশীল।

ভূ-রাজনীতি ও নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা:

মতিলাল অসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের বিশ্লেষক মানব মোদি জানিয়েছেন, পিছনের সপ্তাহে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলায় নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করেছে যে সুইস সোনার উপর মার্কিন শুল্ক প্রতিবেদনগুলো ভুল ছিল। সীমান্ত সুরক্ষা নোট এবং কাস্টমস রিপোর্টের পরে সোনার দামের সাময়িক বৃদ্ধি বিপরীত পথে চলে গেছে।

ইউক্রেন পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বৈঠকের প্রভাব:

একই সময়ে, ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আলাস্কায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরে বাজারে স্থিতিশীলতার প্রভাব পড়েছে। তাছাড়া মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধবিরতি বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য উত্তেজনা কমেছে, যা সোনার প্রতি নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা কিছুটা সীমিত করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের এই চিত্র দেখাচ্ছে, সোনার দাম শুধুই অর্থনৈতিক সূচকের উপর নির্ভরশীল নয়, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক নীতি পরিবর্তনের প্রভাবও তাতে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment