গ্রেটার নয়ডার নিক্কি মার্ডার কেসে প্রকাশ, বিউটি পার্লার ও ইনস্টা রিল নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়। স্বামী স্ত্রীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে।
Nikki Murder Case: গ্রেটার নয়ডায় নিক্কি মার্ডার কেসের ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পণ এবং গার্হস্থ্য বিবাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের এই গল্প অবশেষে ভয়ঙ্কর হত্যায় গিয়ে শেষ হয়েছে। স্বামী বিপিন ভাটি তার স্ত্রী নিক্কিকে জ্যান্ত পুড়িয়ে দিয়েছে এবং এই পুরো মামলায় এখন পুলিশের হাতে বড়সড় তথ্য এসেছে।
বিউটি পার্লার ও ইনস্টা রিল নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, নিক্কি এবং তার স্বামী বিপিনের মধ্যে বিবাদের শুরু নিক্কির ইনস্টাগ্রামে রিল পোস্ট করা এবং তার বিউটি পার্লার পুনরায় খোলার দাবি নিয়ে হয়েছিল। স্বামী বিপিন নিক্কির সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা এবং পার্লার খোলার স্বপ্ন পছন্দ করত না। একাধিকবার এই নিয়ে বাড়িতে ঝগড়া হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, হত্যার দিনও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই বিষয়েই কথা কাটাকাটি হয়।
স্ত্রীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার পরেও অনুশোচনা দেখা যায়নি
হত্যার পর যখন পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী বিপিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক বিষয় যেটা সামনে আসে, তা হল তার নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনও অনুশোচনা নেই। সে স্বীকার করেছে যে, কথা কাটাকাটির সময় সে নিক্কির ওপর দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার মধ্যে অনুতাপের কোনও চিহ্ন ছিল না। পুলিশ অভিযুক্তকে জেলা হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়, যেখানে সে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ তাকে গুলি করে ধরে ফেলে।
১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে অভিযুক্তকে
নিক্কির বোন কাঞ্চনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ২৩ আগস্ট অভিযুক্ত স্বামী বিপিনকে গ্রেফতার করে। পরে আদালত তাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। নিক্কির ছেলে, যে নিজের চোখে এই পুরো ঘটনা দেখেছে, এই মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। বাচ্চাটি বার বার তার বাবার কুকীর্তিগুলোর বর্ণনা দিচ্ছে।
শ্বশুর ও দেওর এখনও পলাতক, পুলিশের তল্লাশি চলছে
পুলিশের অনুসারে, এই পুরো মামলায় শুধুমাত্র স্বামী বিপিন নয়, তার মা দয়া দেবী, বাবা সত্যবীর এবং ভাই রোহিত ভাটির নামও সামনে এসেছে। পণ এবং গার্হস্থ্য হিংসায় এই সকলের জড়িত থাকার কথা বলা হচ্ছে। বিপিনের মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু বাবা এবং ভাই এখনও পলাতক। পুলিশের আটটি দল দিল্লি-এনসিআর-এ তল্লাশি চালাচ্ছে এবং শীঘ্রই দুজনের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহিলা কমিশন তিন দিনে রিপোর্ট চেয়েছে
জাতীয় মহিলা কমিশন এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উত্তর প্রদেশের ডিজিপি-কে তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কমিশন সমস্ত অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেফতারি এবং ক্ষতিগ্রস্থের পরিবার এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তর প্রদেশ মহিলা কমিশনও এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০১৬ সালে নিক্কি এবং বিপিনের বিয়ে হয়
নিক্কি এবং বিপিনের বিয়ে ২০১৬ সালে হয়েছিল। নিক্কির বোন কাঞ্চনের বিয়েও বিপিনের ভাই রোহিতের সঙ্গে হয়েছিল। এফআইআর অনুযায়ী, হত্যার দিন নিক্কির সঙ্গে তার শাশুড়ি এবং স্বামী মিলে হামলা করে। যখন কাঞ্চন বাঁচানোর চেষ্টা করে, তখন তাকেও মারধর করা হয়। এরপর বিপিন নিক্কির ওপর দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়, যার ফলে তার মৃত্যু হয়।
মেয়েকে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের লোকেদের বিক্ষোভ
নিক্কির পরিবার মেয়েকে ন্যায় পাইয়ে দেওয়ার জন্য এখন রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবারের লোকেদের বক্তব্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারা শান্ত হবে না। ক্ষতিগ্রস্থের বোন কাঞ্চন লাগাতার পুলিশের কাছে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।