গুজরাটের ডোকর মন্দিরে দিওয়ালির পর অনন্য ঐতিহ্য: ৩০০০ কেজি অন্নকূট প্রসাদ 'লুঠ' করেন ভক্তরা

গুজরাটের ডোকর মন্দিরে দিওয়ালির পর অনন্য ঐতিহ্য: ৩০০০ কেজি অন্নকূট প্রসাদ 'লুঠ' করেন ভক্তরা

দিওয়ালির ধুমধামের পর যখন গোটা ভারতে নীরবতা নেমে আসে, তখন গুজরাটের একটি মন্দিরে এক অনন্য ঐতিহ্য শুরু হয়। এই সময় মন্দিরে 'অন্নকূট' প্রসাদ তৈরি করা হয়, যা নেওয়ার জন্য হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে ভিড় জমান।

ডোকর মন্দির: গুজরাটের ডোকর জি মন্দিরে দিওয়ালির পর প্রতি বছর এক অনন্য এবং আকর্ষণীয় ঐতিহ্য পালন করা হয়, যা ভক্ত এবং পর্যটকদের জন্য এক বড় আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে ভগবান কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিবেদিত 'অন্নকূট' উৎসব উদযাপিত হয়, যেখানে ৩০০০ কিলোগ্রামেরও বেশি প্রসাদ তৈরি করা হয়। কিন্তু এই প্রসাদ বিতরণ কোনো সাধারণ পদ্ধতিতে হয় না, বরং ভক্তরা এটি 'লুট' করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এই ঐতিহ্য প্রায় ২৫০ বছর পুরনো এবং এটি প্রতি বছর মহা উৎসাহের সাথে পালিত হয়। এই আয়োজনে প্রায় ৮০টি গ্রামের মানুষ অংশ নেন, যারা মন্দিরের কপাট খোলার সাথে সাথেই প্রসাদ পাওয়ার জন্য ছুটে যান।

অন্নকূটের গুরুত্ব

ডোকর মন্দির, যা রণছোড়রায় ডোকর মন্দির নামেও পরিচিত, ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গীকৃত। দিওয়ালির পর এখানে আয়োজিত অন্নকূট উৎসবে ভগবান কৃষ্ণের সম্মানে বিভিন্ন প্রকারের ব্যঞ্জন তৈরি করা হয়। অন্নকূটে চাল, বুন্দি, মিষ্টি, ফল এবং অন্যান্য শস্য ব্যবহার করা হয়। মন্দিরের পুরোহিতদের দ্বারা ভগবান রণছোড়রায়কে প্রসাদ নিবেদন করার পর দুপুর প্রায় ২:৩০ মিনিটে মন্দিরের কপাট খোলা হয়। কপাট খোলার সাথে সাথেই ভক্তরা 'জয় রণছোড়' জয়ধ্বনিতে ছুটে যান এবং প্রসাদ মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে 'লুণ্ঠিত' হয়ে যায়।

এই অনন্য ঐতিহ্যে ভক্তদের প্রচুর ভিড় জমে। প্রায় ৮০টি গ্রামের ভক্তরা এই উপলক্ষে মন্দিরে আসেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মন্দির প্রাঙ্গণে পুলিশ মোতায়েন থাকে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ঐতিহ্য শুধু ধর্মীয় আস্থার প্রতীক নয়, বরং এটি এখানকার সাংস্কৃতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। অন্নকূট উৎসবে অংশগ্রহণ করে ভক্তরা কেবল ভগবান কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার সুযোগ পান না, বরং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং উৎসবের আনন্দও অনুভব করেন।

অনন্য ঐতিহ্য, অনন্য উৎসব

অন্যান্য মন্দিরের মতো ডোকর জি মন্দিরে প্রসাদ শান্তিপূর্ণভাবে বিতরণ করা হয় না। এখানে প্রসাদ 'লুট' করার ঐতিহ্য এটিকে অনন্য করে তুলেছে। এই প্রক্রিয়ায় ভক্তরা তাদের গতি এবং উদ্দীপনার জোরে প্রসাদ সংগ্রহ করেন। এই দৃশ্য এতটাই আকর্ষণীয় যে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এটি দেখতে আসেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে এই উৎসবের বিশেষত্ব হলো এটি কেবল ধর্মীয় শ্রদ্ধা বাড়ায় না, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের শক্তি এবং অংশগ্রহণের অনুভূতিকেও উৎসাহিত করে।

Leave a comment