ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে ভারতীয় রপ্তানির উপর 50% শুল্ক কমে 15–16% হতে পারে। সিইএ নাগেশ্বরন শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের আশা প্রকাশ করেছেন। আমেরিকা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমিয়ে চীনের ঘাটতি পূরণ করতে চায়, যার ফলে ভারতের জন্য সস্তা জ্বালানি বাণিজ্য এবং রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
50% শুল্ক: ভারত ও আমেরিকা একটি বড় বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ভারতীয় পণ্যের উপর 50% ভারী শুল্ক কমে 15–16% হতে পারে। সিইএ নাগেশ্বরন এই বছর অতিরিক্ত 25% শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা প্রকাশ করেছেন। আমেরিকা, চীনাদের আমেরিকান ভুট্টা আমদানিতে কমার কারণে ভারতকে নতুন বাজার হিসেবে দেখছে। চুক্তির অধীনে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা কমাতে পারে, অন্যদিকে আমেরিকা থেকে জ্বালানি বাণিজ্যে ছাড় পেতে পারে, যা উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
শাস্তিমূলক শুল্কে সম্ভাব্য ছাড়
কলকাতায় ভারত চেম্বার অফ কমার্সের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (সিইএ) নাগেশ্বরন এই বিষয়ে আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত 25 শতাংশের অতিরিক্ত শাস্তিমূলক শুল্কের সমাধান দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই 25 শতাংশ শুল্ক আমেরিকান হোয়াইট হাউস দ্বারা আরোপ করা হয়েছিল, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।
নাগেশ্বরন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে পারস্পরিক শুল্কও কমতে পারে। তিনি বলেন যে, এই 25 শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক 15-16 শতাংশের স্তরে নেমে আসতে পারে। যদি এটি ঘটে, তাহলে এটি ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য উদযাপনের একটি সুযোগ হবে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর বিষয়ে বিবেচনা
এই বাণিজ্য চুক্তির কিছু শর্তে ভারত কর্তৃক রাশিয়ার তেল কেনা ধীরে ধীরে কমানোর বিকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাশিয়ার তেল কেনার কারণেই আমেরিকান অতিরিক্ত 25 শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত তার অপরিশোধিত তেলের প্রায় 34 শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করে, যেখানে আমেরিকা থেকে এটি মাত্র 10 শতাংশ। এছাড়াও, কৃষি খাতেও ভারত কিছু ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে।
চীন আমেরিকাকে বাধ্য করেছে, ভারতের লাভ
এই চুক্তিতে আমেরিকার এই পদক্ষেপের পেছনে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা তার কৃষি পণ্যের জন্য নতুন ক্রেতা খুঁজছে, কারণ চীন আমেরিকান ভুট্টার আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। 2022 সালে চীন আমেরিকা থেকে 5.2 বিলিয়ন ডলারের ভুট্টা কিনেছিল, যেখানে 2024 সালে এই পরিমাণ কমে মাত্র 331 মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা হতে পারে। ভারত আমেরিকা থেকে নন-জিএম ভুট্টার আমদানি বাড়াতে পারে, যদিও এর উপর আমদানি শুল্ক 15 শতাংশে বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা থেকে ভুট্টার আমদানি কোটা বার্ষিক 0.5 মিলিয়ন টন।
সস্তা তেল এবং জ্বালানি বাণিজ্যে ছাড়
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত এই চুক্তির অধীনে ইথানল আমদানির অনুমতি দেওয়া এবং রাশিয়ার তেল কেনা কমানোর বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে। এর বদলে আমেরিকা থেকে জ্বালানি বাণিজ্যে ছাড় পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। সরকারি তেল সংস্থাগুলিকে আমেরিকা থেকে অপরিশোধিত তেল সংগ্রহের উৎস বৈচিত্র্যময় করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
যদিও আমেরিকা এখনও রাশিয়ার ছাড়যুক্ত মূল্যে তেল সরবরাহ করতে সম্মত হয়নি। তবে রাশিয়ার ছাড় এবং বেঞ্চমার্ক অপরিশোধিত তেলের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। 2023 সালে প্রতি ব্যারেল 23 ডলারের পার্থক্য এখন কমে মাত্র 2 থেকে 2.5 ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এবং আমেরিকান অপরিশোধিত তেল প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।
ভারতের রপ্তানির উপর সম্ভাব্য প্রভাব
অর্থবছর 2025-এ আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি 86.51 বিলিয়ন ডলার ছিল। এই পরিসংখ্যান আমেরিকাকে ভারতের জন্য বৃহত্তম রপ্তানি বাজার তৈরি করে। সিইএ নাগেশ্বরন-এর মতে, এই বছর শুল্কের প্রভাব বেশি পড়েনি, কারণ ভারত ইতিমধ্যেই 50 শতাংশ ভলিউম অর্জন করেছিল।
তবে, যদি এই শুল্ক বজায় থাকত, তাহলে আগামী বছর আমেরিকায় রপ্তানিতে 30 শতাংশ হ্রাস পেতে পারত। এটি ভারতের মোট রপ্তানি এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) জন্য একটি বড় ধাক্কা হত। এই বাণিজ্য চুক্তি এমন সম্ভাব্য ধাক্কা থেকে রক্ষা করতে পারে।