গুরু নানক দেবজী ছিলেন শিখ ধর্মের প্রথম গুরু এবং আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ১৪৬৯ সালে তলোয়ান্দি (বর্তমানে নানকানা সাহিব, পাকিস্তান) এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আধ্যাত্মিক চিন্তা, সেবা এবং সমতার বার্তার প্রবর্তক ছিলেন।
গুরু নানক: শিখ ধর্মের অনুসারীদের জন্য শুধু নয়, সমগ্র মানবতার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি ১৪৬৯ সালে কার্তিক পূর্ণিমায় তলোয়ান্দি (বর্তমানে পাকিস্তানের নানকানা সাহিব) এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নানক, নানক দেবজী, বাবা নানক বা নানকশাহ নামে পরিচিত। গুরু নানকের ব্যক্তিত্ব কেবল ধর্মীয় নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, কবি, দেশপ্রেমিক এবং বিশ্ববন্ধু। তাঁর জীবন ও শিক্ষা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক।
শৈশবকাল এবং প্রাথমিক জীবন
গুরু নানকের শৈশবকাল তাঁর অনন্য বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক ঝোঁকের জন্য বিখ্যাত ছিল। জন্ম থেকেই তাঁর মধ্যে सांसारিক মোহ এবং বস্তুগত আকাঙ্ক্ষার প্রতি কম আগ্রহ ছিল। তাঁর পিতামাতা মেহতা কালুচাঁদ খত্রী এবং তৃপ্তা দেবী তাঁকে শিক্ষা এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি উৎসাহিত করেছিলেন, কিন্তু নানকের মন শিক্ষা এবং খেলাধুলায় বসতো না। সাত থেকে আট বছর বয়সেই তিনি ঐতিহ্যবাহী স্কুল শিক্ষা ত্যাগ করেন। তাঁর ধ্যান কেবল ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিক চিন্তায় ছিল।
তাঁর শৈশবের অনেক ঘটনা অলৌকিক বলে মনে করা হয়। কথিত আছে যে একবার তাঁর মাথার উপর সাপ ছায়া দিতে এসেছিল, যা দেখে গ্রামের শাসক রায় বুলার তাঁর প্রতি নতমস্তক হন। তাঁর বোন নানকী এবং গ্রামের অন্যান্য লোকেরা তাঁর দেবত্ব চিনতে পেরেছিলেন।
পারিবারিক জীবন এবং বিবাহ
নানক দেবজীর বিবাহ ১৬ বছর বয়সে সুলক্ষণীর সাথে হয়েছিল, যিনি গুরুদাসপুর জেলার লাখৌকি অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর দুটি পুত্র ছিল—শ্রীচাঁদ এবং লখমী দাস। শ্রীচাঁদ পরবর্তীতে উদাসী সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হন। ১৫০৭ সালে তাঁর পরিবারের ভার তাঁর শ্বশুরের উপর ছেড়ে গুরু নানক চার জন প্রধান সঙ্গী—মরদানা, লহনা, বালা এবং রামদাস—এর সাথে তীর্থযাত্রার জন্য যাত্রা করেন। এই যাত্রাকে ‘উদাসিয়াঁ’ বলা হত।
গুরু নানকের উদাসিয়াঁ (যাত্রা)
গুরু নানক দেবজীর চারটি প্রধান যাত্রাকে শিখ ঐতিহ্যতে ‘উদাসিয়াঁ’ বলা হয়। এই যাত্রাগুলি কেবল ভৌগোলিক ভ্রমণ ছিল না, বরং তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য—সমতা, ঐক্য এবং ঈশ্বর ভক্তি—ছড়ানোর জন্য ছিল।
- প্রথম উদাসী (১৫০০-১৫০৬) – পূর্ব ভারত ভ্রমণ
প্রথম উদাসীতে গুরু নানক পাঞ্জাব থেকে বেরিয়ে ভারতের পূর্ব দিকে যাত্রা করেন। এই সময় তিনি সুলতানপুর, পানিপথ, হরিদ্বার, বেনারস, পাটনা, পুরী, আসাম এবং ঢাকা ভ্রমণ করেন। তিনি প্রতিটি স্থানে মানবতা, সমতা এবং ঈশ্বরের উপাসনার বার্তা দেন। - দ্বিতীয় উদাসী (১৫০৬-১৫১৩) – দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ
দ্বিতীয় উদাসীতে গুরু নানক দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে যান। প্রধান স্থানগুলির মধ্যে ছিল রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কা। এখানে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে মানুষকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেন এবং জাতিভেদ ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে বার্তা ছড়িয়ে দেন। - তৃতীয় উদাসী (১৫১৪-১৫১৮) – হিমালয় এবং তিব্বত ভ্রমণ
তৃতীয় উদাসীতে গুরু নানক উত্তর দিকে হিমালয় এবং তিব্বতে যান। কাশ্মীর, নেপাল, তাশখন্দ, তিব্বত এবং কৈলাস मानसरोवर ছিল তাঁর প্রধান গন্তব্য। এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে জীবনে সাধুতা এবং ঈশ্বর ভক্তির গুরুত্ব বোঝানো। - চতুর্থ উদাসী (১৫১৯-১৫২১) – মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ
চতুর্থ উদাসীতে গুরু নানক পশ্চিম দিকে মধ্যপ্রাচ্যে যান। এই যাত্রায় তিনি কাবুল, বাগদাদ, মক্কা এবং মদিনা ভ্রমণ করেন। এই যাত্রার সময় তিনি বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের সাথে संवाद স্থাপন করেন এবং সমতা ও মানবতার বার্তা দেন।
গুরু নানকের এই যাত্রাগুলি তাঁর বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবতার প্রতি তাঁর শক্তিশালী বার্তার পরিচায়ক।
বিবাদ এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
গুরু নানকের যাত্রার বিবরণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। शुरुआती শিখ গ্রন্থে কিছু স্থান এবং ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। উনিশ শতকের জনমশাখীতে তাঁর চারটি উদাসীর বর্ণনা আরও বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়। কিছু পশ্চিমা পণ্ডিত মনে করেন যে এই যাত্রাগুলির কাহিনীতে পরবর্তীতে সুফি ঐতিহ্য এবং স্থানীয় কিংবদন্তীর মিশ্রণ ঘটেছে।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ এবং বাগদাদ পাথর নিয়ে বিতর্ক বেশি। কিছু লোক বলে যে ১৫১১-১৫১২ সালে গুরু নানক সেখানে ছিলেন, আবার কেউ কেউ এটিকে উনিশ শতকের शिलालेख মনে করেন। এই ধরনের বিতর্ক তাঁর জীবন ও কর্মের ঐতিহাসিক প্রমাণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
গুরু নানকের দর্শন
গুরু নানক দেবজী সর্বেশ্বরবাদী ছিলেন। তিনি মূর্তি পূজার ঐতিহ্যের বিপরীতে কেবল এক ঈশ্বরের উপাসনার পথ দেখিয়েছেন। তাঁর দর্শন মানবতা, সমতা এবং নারী সম্মানের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। তিনি জাতিভেদ, সামাজিক বৈষম্য এবং ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে आवाज তোলেন।
তাঁর শিক্ষা মানবতা এবং ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণের অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি ধর্মকে কেবল আচার-অনুষ্ঠান এবং বাহ্যিক পূজা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং এটিকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঈশ্বর ভক্তি এবং নৈতিকতার সাথে যুক্ত করার উপর জোর দিয়েছেন।
গুরু নানক এবং হিন্দি সাহিত্য
গুরু নানক দেবজীর অবদান হিন্দি সাহিত্যেও অমূল্য। তিনি ভক্তিকালের নির্গুণ ধারার কবি-তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। তাঁর শিক্ষা ও ভজনের সংগ্রহ ‘গ্রন্থ সাহেব’-এ সংকলিত আছে। आचार्य রামচন্দ্র শুক্লের মতে, তাঁর भजन भक्तिभाव ও আধ্যাত্মিক চিন্তায় পরিপূর্ণ।
গুরু নানকের সাহিত্যিক অবদান কেবল শিখ ধর্ম নয়, সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর भजन, कर्मकांड থেকে परे जीवन এবং आध्यात्मिक मार्गदर्शन का संदेश देते हैं।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবদান
গুরু নানক সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি সমাজে নারীদের অধিকার, গরিব ও पीड़ितों की सेवा और धार्मिक समानता को महत्व दिया। তাঁর বার্তা তৎকালীন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও सामाजिक अन्याय के खिलाफ संघर्ष किया।
তিনি কেবল ধর্মীয় गुरु नहीं थे, बल्कि समाज सुधारक, दार्शनिक और मानवतावादी भी थे। उनके जीवन का मूल उद्देश्य था—सभी मनुष्यों में ईश्वर का प्रकाश देखना और प्रेम, समानता और भाईचारे का संदेश फैलाना।
স্বর্ণ মন্দির কেবল শিখ ধর্মের ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, এটি मानवता, सेवा और समानता का प्रतीक भी है। इसकी भव्यता, लंगर सेवा और सभी के लिए खुले द्वार इसे एक अद्वितीय आध्यात्मिक स्थल बनाते हैं। यहाँ श्रद्धालु शांति, भक्ति और भाईचारे का अनुभव करते हैं।