হক মুভি রিভিউ: শাহবানো মামলার প্রেক্ষাপটে মুসলিম মহিলাদের অধিকারের এক সাহসী লড়াই

হক মুভি রিভিউ: শাহবানো মামলার প্রেক্ষাপটে মুসলিম মহিলাদের অধিকারের এক সাহসী লড়াই

চার দশক আগে বহুল আলোচিত শাহবানো মামলায় সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম মহিলাদের পক্ষে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল। এই রায়ে তালাকের পর ভরণপোষণ প্রদানের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা মহিলাদের অধিকার এবং সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে বিতর্কের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।

  • মুভি রিভিউ: হক
  • অভিনেতা: ইমরান হাশমি, ইয়ামি গৌতম ধর, শিবা চাড্ডা, বর্তিকা সিং
  • বিভাগ: হিন্দি
  • পরিচালক: সুপর্ণ বর্মা
  • রেটিং: 2.5/5

বিনোদন ডেস্ক: প্রায় চার দশক আগে বহুল আলোচিত শাহবানো মামলা দেশে মহিলাদের অধিকার নিয়ে এক বড় সামাজিক ও আইনি পরিবর্তন এনেছিল। সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম মহিলাদের তালাকের পর ভরণপোষণ পাওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, যা দেশের সাংবিধানিক অধিকারের দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। এই ঐতিহাসিক রায় দ্বারা অনুপ্রাণিত এই সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘হক’ সেই মহিলাদের গল্প বলে, যারা নিজেদের অধিকারের জন্য সমাজ ও আইনি পথে একা লড়াই করে।

ছবির গল্প

‘হক’ ছবির গল্প ১৯৬০-এর দশকের উত্তরপ্রদেশের একটি ছোট শহর থেকে শুরু হয়। আহমেদ খান (ইমরান হাশমি) এবং শাজিয়া বানু (ইয়ামি গৌতম ধর)-এর বিয়ে এক সুখী জীবনের সূচনা। তাদের তিন সন্তান এবং জীবন স্বাভাবিকভাবে কাটছে। গল্পে মোড় আসে যখন আহমেদের প্রথম প্রেমিকা সায়রা (বর্তিকা সিং)-এর স্বামীর মৃত্যুর খবর আসে। আহমেদ শাজিয়াকে না জানিয়ে সায়রাকে বিয়ে করে এবং তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। শাজিয়ার জন্য এই পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং সে তার সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়।

শুরুতে আহমেদ ভরণপোষণ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। শাজিয়া তার অধিকার দাবি করলে আহমেদ তাকে তিন তালাক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ধর্মীয় আদালত থেকে ন্যায়বিচার না পাওয়ায় শাজিয়া তার বাবার সাহায্যে জেলা আদালতে ভরণপোষণের মামলা দায়ের করে। গল্পে কোর্টরুম ড্রামা অসাধারণ। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত শাজিয়ার পক্ষে রায় দেয়। এরপর মামলা হাইকোর্ট এবং অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায়, যেখানে শাজিয়ার সংগ্রাম দেশের সমস্ত মুসলিম মহিলাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।

পরিচালনা ও চিত্রনাট্য

ছবির পরিচালক সুপর্ণ বর্মা সংবেদনশীল ও বেদনাদায়ক গল্পটিকে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে পর্দায় তুলে ধরেছেন। চিত্রনাট্য লিখেছেন রেশু নাথ। শুরুতে ছবিটি একটি আনন্দময় প্রেমের গল্পের মতো মনে হয়, যা দর্শকদের ধরে রাখে। বিরতির আগে গল্পে মোড় আসে এবং দ্বিতীয়ার্ধে কোর্টরুমে তর্ক-বিতর্কের ধারা চলতে থাকে। আদালতের আইনি বিতর্কের মাঝে শাজিয়াকে সমাজের কাছ থেকেও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

ছবিতে সিনেমাটোগ্রাফি এবং ক্যামেরা ওয়ার্ক চমৎকার। পেরিওড ড্রামা অনুযায়ী সেট ডিজাইন, পোশাক এবং অন্যান্য উপাদান গল্পটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। ডায়লগ এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও দর্শকদের আবেগগতভাবে সংযুক্ত করতে সক্ষম।

অভিনয় ও অভিনেতাদের পারফরম্যান্স

ইমরান হাশমি অনেকদিন পর পর্দায় শক্তিশালী পারফরম্যান্স করেছেন। বিশেষ করে কোর্টরুম দৃশ্যে তার অভিনয় খুবই প্রভাবশালী। ইয়ামি গৌতম ধর শাজিয়ার চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন। পীড়িত ও সংগ্রামী নারীর ভূমিকায় তিনি ব্যথা, আশা এবং সাহসের অনুভূতি দুর্দান্তভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। বর্তিকা সিং সায়রার চরিত্রে ভারসাম্যপূর্ণ অভিনয় করেছেন, যা গল্পের মোড়কে দৃঢ়তা দেয়।

ছবির সঙ্গীত গড়পড়তা, তবে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং কোর্টরুমের সংলাপ গল্পে গভীরতা যোগ করে। সিনেমাটোগ্রাফিতে দৃশ্যগত সৌন্দর্য এবং পিরিয়ড সেটআপ ছবিটিকে বাস্তবতা প্রদান করে।

কেন দেখবেন ‘হক’ ছবিটি?

  • আইনি ও সামাজিক ইস্যুভিত্তিক গল্প – মুসলিম মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর ভিত্তি করে।
  • চমৎকার অভিনয় – ইমরান হাশমি এবং ইয়ামি গৌতম ধরের শক্তিশালী কোর্টরুম পারফরম্যান্স।
  • পেরিওড ড্রামার অভিজ্ঞতা – ১৯৬০-এর দশকের উত্তরপ্রদেশের বাস্তবসম্মত চিত্রণ।
  • শক্তিশালী বার্তা – নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা মহিলাদের অনুপ্রাণিত করে এমন গল্প।

যদি আপনি কোর্টরুম ড্রামা পছন্দ করেন, অথবা ইমরান হাশমি এবং ইয়ামি গৌতম ধরের ভক্ত হন, তবে ‘হক’ ছবিটি দেখা আপনার জন্য একটি আবেগপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হবে।

Leave a comment