হরি হর বীরা মাল্লু: দ্বিতীয় দিনে বক্স অফিসে ধস, নির্মাতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

হরি হর বীরা মাল্লু: দ্বিতীয় দিনে বক্স অফিসে ধস, নির্মাতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

পবন কল্যাণ এবং ববি দেওলের বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘হরি হর বীরা মাল্লু’ মুক্তির প্রথম দিনেই বক্স অফিসে দারুণ শুরু করেছিল। বৃহস্পতিবার মুক্তিপ্রাপ্ত এই পিরিয়ড অ্যাকশন ড্রামা ফিল্মটি প্রিমিয়ার শোয়ের পাশাপাশি প্রথম দিনে ভালোই আয় করেছিল, যা শুধু টলিউড ইন্ডাস্ট্রি নয়, অনুরাগীদের মধ্যেও উৎসাহ জুগিয়েছিল। ফিল্মের ওপেনিং নিশ্চিতভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে বড় বাজেটের এই ফিল্ম বক্স অফিসে লম্বা দৌড় দেবে।

দ্বিতীয় দিনে মন্দা, আয়ে বড়সড় পতন

তবে শুক্রবার ফিল্মের প্রদর্শন প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। মুক্তির দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শুক্রবার ফিল্মের আয়ে বড়সড় পতন দেখা যায়। যে ফিল্ম প্রথম দিনে মোট ৩৪.৭৫ কোটি টাকা আয় করেছিল, সেটি দ্বিতীয় দিনে মাত্র ৮ কোটি টাকা আয় করতে পেরেছে। এতে ট্রেড অ্যানালিস্ট এবং নির্মাতারা বড় ধাক্কা খেয়েছেন।

এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ফিল্মটি সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং দুর্বল প্রচারকে। দর্শকদের মধ্যে ফিল্মটি নিয়ে প্রথম দিনে যে ক্রেজ দেখা গিয়েছিল, তা দ্বিতীয় দিনে ফিকে হয়ে যায়।

এখন পর্যন্ত মোট কত আয় হয়েছে

'হরি হর বীরা মাল্লু' প্রিমিয়ার শো থেকে প্রায় ১২.৭৫ কোটি টাকা আয় করেছিল। এরপর প্রথম দিনের আয় ছিল ৩৪.৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে দ্বিতীয় দিনে ফিল্মের ব্যবসা কমে ৮ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দুই দিনে ফিল্মের মোট আয় ৫৫.৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

ফিল্মের ওপেনিং শক্তিশালী ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় দিনের পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী দিনে ফিল্মের আয়ে উন্নতি না হলে এর পথ কঠিন হতে পারে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনের দিকে নজর

এখন ফিল্মের নির্মাতা এবং ট্রেড অ্যানালিস্টদের নজর শনিবার এবং রবিবারের আয়ের দিকে। আশা করা হচ্ছে যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ছুটি এবং পবন কল্যাণের স্টারডমের প্রভাব দেখা যেতে পারে। যদি ফিল্মটি শনিবার ২০ কোটি এবং রবিবার ২২-২৫ কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যবসা করতে পারে, তাহলে এটি প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নেওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

২৫০ কোটির বাজেটের ফিল্মের প্রয়োজন বড় বক্স অফিস সাপোর্ট

‘হরি হর বীরা মাল্লু’র বাজেট প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিল্মটিকে হিট-এর তালিকায় আসতে হলে কমপক্ষে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার বিশ্বব্যাপী কালেকশন করতে হবে। শুধুমাত্র প্রথম দুই দিনের আয় দেখে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না, তবে আয়ে এই পতন অবশ্যই উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ফিল্মের গল্প এবং প্রেক্ষাপট

এই ফিল্মটি সপ্তদশ শতাব্দীর বীর ডাকু বীরা মাল্লুর গল্প, যাকে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের প্রাসাদ থেকে কোহিনূর হীরা চুরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও ফিল্মের গল্প শুধু ধনসম্পদ লুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এমন একটি লড়াইকে তুলে ধরে যা অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পবন কল্যাণ এই ফিল্মে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন এবং তাঁর সঙ্গে নিধি আগরওয়াল, ববি দেওল, বিক্রমজিৎ ভিরা, অদিতি গৌতম এবং নার্গিস ফাখরি-র মতো শিল্পীরা প্রধান চরিত্রে রয়েছেন।

ববি দেওলের ভিলেন অবতারের আলোচনা

ববি দেওল এই ফিল্মে ঔরঙ্গজেবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি তাঁর লুক এবং সংলাপের মাধ্যমে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যদিও ফিল্মের স্ক্রিপ্ট এবং স্ক্রিনপ্লে নিয়ে কিছু দর্শক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও দিয়েছেন।

কলা নির্দেশনা এবং অ্যাকশন সিকোয়েন্সের প্রশংসা

ফিল্মের প্রেক্ষাপট এবং কলা নির্দেশনা চমৎকার। প্রতিটি ফ্রেমে পিরিয়ড টাচ দেখা যায়। অ্যাকশন সিকোয়েন্সগুলিকে শক্তিশালী এবং জমকালোভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। পবন কল্যাণের অ্যাকশন এবং ডায়লগ ডেলিভারি অনুরাগীরা খুব পছন্দ করেছেন।

মুক্তির আগে 'সাইয়ারা' গানের ক্রেজ

ফিল্মের মুক্তির আগে এর গান 'সাইয়ারা' ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ট্রেন্ড করেছিল। এই গানটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফিল্মের জন্য একটি উত্তেজনা তৈরি করেছিল, যার প্রভাব ফিল্মের প্রথম দিনের আয়েও দেখা গেছে।

রাজনীতি এবং সিনেমার সংমিশ্রণ

ফিল্মে পবন কল্যাণের চরিত্রটি যেভাবে অন্যায় এবং ক্ষমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তা অনেকটা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে মেলে। এটাই কারণ যে অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় তাঁর সমর্থকরা ফিল্মটিকে একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখেছেন।

Leave a comment