হরিয়ানা সরকার রাজ্যে ধর্মান্তরকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে প্রণীত আইনের অধীনে এখন এর বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে বিবাহের উদ্দেশ্যে ধর্ম গোপন করার ঘটনাগুলি রোধ করার জন্য নেওয়া হয়েছে।
চণ্ডীগড়: হরিয়ানা সরকার 'হরিয়ানা বিধি বিরুদ্ধ ধর্ম সংপরিবর্তন নিবারণ আইন ও নিয়ম ২০২২' রাজ্যে কঠোরভাবে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আইনের অধীনে এখন কোনও ব্যক্তি যদি ধর্ম গোপন করে বিবাহ করে, তবে সেই বিবাহ অবৈধ বলে গণ্য হবে। তবে, এই ধরনের বিবাহ থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান আইনি স্বীকৃতি এবং সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের সম্পূর্ণ অধিকার পাবে।
স্বরাষ্ট্র দফতর কর্তৃক জারি করা নির্দেশিকাগুলির পরেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে। হরিয়ানার অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সুমিতা মিশ্র সমস্ত জেলার উপায়ুক্ত, পুলিশ কমিশনার এবং সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকদের এই আইন কঠোরভাবে পালন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনের উদ্দেশ্য: ধর্মীয় স্বাধীনতা নয়, প্রতারণা রোধ
সুমিতা মিশ্র স্পষ্ট করেছেন যে এই আইনের উদ্দেশ্য কোনও ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা নয়, বরং এর মূল উদ্দেশ্য হল বিবাহের নামে জোরপূর্বক বা প্রতারণামূলক ধর্মান্তরকরণের মতো ঘটনাগুলি রোধ করা। তিনি বলেন যে যদি কোনও ব্যক্তি প্রতারণা, চাপ, লোভ বা অযৌক্তিক প্রভাব ব্যবহার করে ধর্ম পরিবর্তন করায়, তবে এই আইন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দেয়। বিশেষভাবে বিবাহ-এর মতো সংবেদনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্ম গোপন করে করা কার্যকলাপ সংবিধান ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হবে।
ধর্ম গোপন করে বিবাহ: বিবাহ অবৈধ
আইন অনুসারে, যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ধর্ম গোপন করে বিবাহ করে, তবে সেই বিবাহ বৈধ বলে বিবেচিত হবে না। তবে, এর থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা সম্পূর্ণ আইনি স্বীকৃতি পাবে। তারা উত্তরাধিকার আইনের অধীনে মাতা বা পিতার সম্পত্তিতে অংশীদার হতে পারবে। এই বিধান সামাজিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সুষম দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যেখানে বিবাহের প্রতারণামূলক দিকটি রোধ করা হয়েছে, তবে শিশুদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিকে তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং তিন লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এই শাস্তি শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং এতে জড়িত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করানো ব্যক্তিদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, যদি তারা বিনা নোটিশে ধর্মান্তরকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
ধর্ম পরিবর্তনের আগে তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক
- ধর্ম পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট জেলার উপায়ুক্তকে পূর্বে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
- ধর্ম পরিবর্তন সম্পর্কিত ধর্মীয় আচার বা অনুষ্ঠান আয়োজনকারী পুরোহিত বা মৌলভিদেরও তথ্য দিতে হবে।
- বিজ্ঞপ্তির পরে ৩০ দিনের আপত্তি জানানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে যে কেউ এই ধর্ম পরিবর্তনের উপর আপত্তি জানাতে পারে।
- এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল এটি নিশ্চিত করা যে ধর্ম পরিবর্তন স্বেচ্ছায়, স্বচ্ছভাবে এবং চাপমুক্ত পরিবেশে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়। প্রায়শই দেখা যায় যে বিবাহের উদ্দেশ্যে কিছু লোক মিথ্যা পরিচয়ের আশ্রয় নেয়, যার ফলে বিবাহের পরে গুরুতর সামাজিক এবং আইনি বিরোধ দেখা দেয়। এই আইন সেই ঘটনাগুলি রোধ করতে সহায়ক হবে যেখানে বিয়ের নামে ধর্মীয় প্রতারণা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ এবং পারিবারিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে সমাজে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস বাড়বে।