দেশের অন্যতম প্রধান ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারক হ্যাভেলস ইন্ডিয়া ২০২৬ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল ফল প্রকাশ করেছে। এই ত্রৈমাসিকে কোম্পানির স্ট্যান্ড alone নেট মুনাফা ১৪ শতাংশ কমে ৩৫২ কোটি রুপি হয়েছে, যা গত বছরের একই ত্রৈমাসিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
কোম্পানি এই পতনের প্রধান কারণ হিসেবে দুর্বল গ্রীষ্মকালীন পরিস্থিতি এবং এর সাথে সম্পর্কিত ধীর চাহিদা, বিশেষ করে এসি, ফ্যান এবং এয়ার কুলারের মতো শীতলীকরণ পণ্যগুলির বিক্রিকে দায়ী করেছে।
বিক্রয়ে প্রভাব, ৬ শতাংশ পতন
শুধু মুনাফা নয়, কোম্পানির নেট বিক্রিও বছরে ৬ শতাংশ কমেছে। এপ্রিল থেকে জুন মাসে হ্যাভেলসের বিক্রি ছিল ৫,৪৩৮ কোটি রুপি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম।
কোম্পানির মতে, এই ত্রৈমাসিকে গ্রাহকের চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যে পণ্যগুলো বেশি বিক্রি হয় সেগুলোর চাহিদা কমেছে। হ্যাভেলসের এই পতন এমন সময়ে এলো যখন বাজার ইলেকট্রনিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা করছিল।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দুটি প্রধান ব্রোকারেজ হাউস, মোতিলাল ওसवाल (MOSL) এবং অ্যান্টিক, হ্যাভেলসের ফলাফল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। মোতিলাল ওसवाल শেয়ারের উপর 'নিরপেক্ষ' রেটিং বজায় রেখেছে তবে লক্ষ্য মূল্য ১,৭১০ রুপি থেকে কমিয়ে ১,৬৮০ রুপি করেছে।
MOSL বলছে যে কোম্পানির বিক্রি, মুনাফা এবং মার্জিন সবই তাদের অনুমানের চেয়ে কম ছিল। এই ব্রোকারেজটি তাদের ২০২৬ এবং ২০২৭ অর্থবছরের EPS অনুমান যথাক্রমে ৮ শতাংশ এবং ৭ শতাংশ কমিয়েছে।
অ্যান্টিকের 'কিনুন' রেটিং, তবে লক্ষ্য কমিয়েছে
অন্যদিকে, ব্রোকারেজ অ্যান্টিক হ্যাভেলস ইন্ডিয়ার উপর তার 'কিনুন' রেটিং বজায় রেখেছে, তবে তারাও লক্ষ্য মূল্য কমিয়েছে। পূর্বে তারা ১,৮৫৯ রুপির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, যা এখন কমিয়ে ১,৭৯৭ রুপি করা হয়েছে।
অ্যান্টিক মনে করে যে কোম্পানির লয়েড এবং ইসিডি (ইলেকট্রিক্যাল কনজিউমার ডুরাবলস) বিভাগ দুর্বল হয়েছে, যা ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে। ব্রোকারেজটি ২০২৬ এবং ২০২৭ অর্থবছরের উপার্জনের অনুমান যথাক্রমে ৬ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কমিয়েছে।
হ্যাভেলসের শেয়ারের বর্তমান গতিবিধি
হ্যাভেলস ইন্ডিয়ার শেয়ার বর্তমানে বাজারে ০.৬৭ শতাংশ সামান্য বেড়ে ১,৫৪২.৩০ রুপিতে লেনদেন করছে। এটি সবুজে রয়েছে।
যদি আমরা শেয়ারের ৫২ সপ্তাহের পরিসীমা নিয়ে কথা বলি, তবে এর সর্বোচ্চ স্তর ২,১০৪.৯৫ রুপি এবং সর্বনিম্ন স্তর ১,৩৬০.০৫ রুপি। কোম্পানির বর্তমান বাজার মূলধন প্রায় ৯৮,১০১.৩৬ কোটি রুপি।
অন্যান্য বিভাগেও স্বস্তি নেই
শুধু শীতলীকরণ পণ্য নয়, সুইচগিয়ার, কেবল এবং শিল্প সরঞ্জামের মতো কোম্পানির অন্যান্য প্রধান বিভাগগুলোর বৃদ্ধিও স্থির বা ধীর ছিল।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা জানিয়েছে যে গ্রামীণ বাজারে চাহিদা কম ছিল এবং রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দার প্রভাবও পড়েছে।
হ্যাভেলসের কৌশল এবং ব্যবস্থাপনা ফোকাস
কোম্পানি ইঙ্গিত দিয়েছে যে আগামী সময়ে তারা পণ্য উদ্ভাবন এবং গ্রামীণ বাজারে তাদের দখল জোরদার করার দিকে মনোনিবেশ করবে। এর পাশাপাশি, লজিস্টিকস এবং ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য কাজ করা হচ্ছে।
কোম্পানি আসন্ন উৎসবের মরসুমের আগে কিছু নতুন মডেল চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা গ্রাহকের চাহিদা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বিনিয়োগকারীদের নজর ব্রোকারেজ রিপোর্টের দিকে
হ্যাভেলসের শেয়ারহোল্ডাররা এখন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর রেটিং এবং লক্ষ্যের দিকে নজর রাখছেন। MOSL এবং অ্যান্টিকের রিপোর্টগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে কোম্পানির পারফরম্যান্সের এই মুহূর্তে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন এবং আগামী দুই ত্রৈমাসিকে চাহিদার প্রত্যাবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিনিয়োগকারীরা আরও দেখছেন যে কোম্পানি কীভাবে উৎসবের মরসুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং লয়েড ব্র্যান্ডকে কীভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
বাজার আপাতত সক্রিয়
কোম্পানির দুর্বল ফলাফল সত্ত্বেও, শেয়ারে সামান্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বাজার ইতিমধ্যেই দুর্বল পারফরম্যান্সের সম্ভাবনাকে তার মূল্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যার কারণে শেয়ারে তেমন পতন দেখা যায়নি।
তবে, আসন্ন ত্রৈমাসিকে যদি কোম্পানির পারফরম্যান্সের উন্নতি না হয়, তবে এর প্রভাব শেয়ারে দেখা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীদের চোখ প্রতিটি আপডেটের দিকে এবং কোম্পানির ভবিষ্যতের কৌশলের দিকে।