নতুন দিল্লি: বহু উচ্চ উপার্জনশীল মানুষদের এক অদ্ভুত সমস্যা হলো, আয় অনেক হলেও সঞ্চয় যথেষ্ট হয় না। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নীতিন কৌশিক জানিয়েছেন, এর মূল কারণ হলো জীবনযাত্রার মূল্যস্ফীতি। আয় যত বাড়ে, খরচও তার সঙ্গে অনুপাতে বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষ বাড়ি, গাড়ি, ছুটি, পোশাক এবং বাইরে খাওয়া খরচের জন্য বেশি খরচ করে, আর আর্থিক নিরাপত্তা উন্নত হয় না।
বাহ্যিক সাফল্য বনাম বাস্তব আর্থিক অবস্থা
নীতিন কৌশিকের মতে, অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বা অফিসে তাদের সাফল্যের বাহ্যিক চিত্র দেখায়। তবে বাস্তবে তাদের সঞ্চয় প্রায়ই নগণ্য থাকে। তিনি উদাহরণ দেন একজন শহুরে পেশাদারের, যিনি মাসে ৪.৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। কর কেটে তার হাতে থাকে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা, যা কাগজে বিশাল রাশি মনে হলেও বাস্তব জীবনের ব্যয় সেটি ন্যূনতম সঞ্চয়ে পরিণত করে।
বাস্তব জীবনের ব্যয়ের বিশ্লেষণ
নীতিন কৌশিক বলেন, শহুরে পেশাদারের বার্ষিক খরচের মধ্যে আসে ভাড়া ও পরিবারের জন্য ১৮ লক্ষ টাকা, বাচ্চাদের স্কুল ফি ৬ লক্ষ টাকা, মুদি, জ্বালানি ও গৃহকর্মীর খরচ ৪.৫ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি বাইরে খাওয়া-দাওয়া ও সামাজিক অনুষ্ঠান খরচ ৩ লক্ষ, ভ্রমণ খরচ ৪–৫ লক্ষ, বিমা প্রিমিয়াম ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ৩ লক্ষ টাকা। মোট বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৩৯–৪০ লক্ষ টাকা, যার ফলে সঞ্চয় হয় মাত্র ২–৩ লক্ষ, যা দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়।
তুলনা ও সামাজিক চাপের প্রভাব
নীতিন কৌশিকের মতে, সমস্যা শুধুমাত্র আয়ের পরিমাণে নয়। অন্যদের সঙ্গে ক্রমাগত তুলনা, সহকর্মীর বিলাসবহুল জীবনধারা ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দেখা মানুষের মানসিক চাপ বাড়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া এই চাপকে আরও তীব্র করে তোলে। ফলে মানুষ EMI, ঋণ ও ব্যয়ের বোঝায় ফাঁসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার দিকে নজর দিতে পারে না।
প্রকৃত আর্থিক তৃপ্তির সূত্র
নীতিন কৌশিক বলেন, বেশি উপার্জন বা বেশি খরচ তৃপ্তি আনে না। বরং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো, বিলাসিতা না পছন্দ করে ব্যক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করা, এবং ঋণের ফাঁদ এড়ানো প্রকৃত আর্থিক স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য জীবনের লক্ষ্য স্পষ্ট হওয়া জরুরি এবং সামাজিক চাপের তুলনায় আর্থিক উদ্দেশ্য বেছে নেওয়া প্রয়োজন।
জীবনযাত্রার মান ও “স্ট্যান্ডার্ড লিভিং
কৌশিক আরও উল্লেখ করেন, আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ আপগ্রেড করতে থাকে—উবের থেকে ড্রাইভার, গোয়া থেকে গ্রিস, বড় বাড়ি, নতুন গাড়ি—যেটিকে বর্তমানে আমরা “স্ট্যান্ডার্ড লিভিং” বলি। এই ক্রমাগত আপগ্রেডের ক্ষুধা কখনও শেষ হয় না। সমস্যা মূলত মানসিক ও আর্থিক পরিকল্পনার অভাবে, যা সঠিকভাবে সমাধান করা গেলে আয় বেশি হলেও সঞ্চয় সম্ভব।