হিমাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসে জনজীবন বিপর্যস্ত। ১২৮৬টি রাস্তা এবং ছয়টি জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। নয়টি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জল সরবরাহ বিচ্ছিন্ন, পং বাঁধ থেকে জল ছাড়া হবে।
সিমলা: হিমাচল প্রদেশে অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টি মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। রাস্তা থেকে শুরু করে খেত পর্যন্ত সর্বত্রই ধ্বংসের চিত্র। আবহাওয়া দপ্তর নয়টি জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে। এই পর্যন্ত বর্ষাকালে ৩৪3 জনের প্রাণহানি হয়েছে।
নয়টি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে কাংড়া, উনা এবং হামিরপুর ছাড়া বাকি নয়টি জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুক্রবারও অনেক এলাকায় বৃষ্টি চলতে পারে, তবে শনিবার থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।
রাস্তা বন্ধ, জনজীবন ব্যাহত
প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে রাজ্যে পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১২৮৬টি রাস্তা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ছয়টি জাতীয় সড়কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—
- এনএইচ-০৩
- এনএইচ-০৫
- এনএইচ-২১
- এনএইচ-২০৫
- এনএইচ-৫০৫
- এনএইচ-৩০৫
সবচেয়ে বেশি রাস্তা मंडी (২৯৩), কুল্লু (২২৫) এবং সিমলা (২১৬) জেলায় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও বন্ধ রাখতে হয়েছে।
ফসল ও উদ্যানপালনের ক্ষতি
অবিরাম বৃষ্টি ও জল জমে থাকার কারণে কৃষি ও উদ্যানপালন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং আপেল বাজারে সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবহনের অভাবে ব্যবসায়ীরা কেনাকাটা থেকে পিছিয়ে আসছে।
পং বাঁধ থেকে আরও জল ছাড়া হবে
ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড (BBMB) পং বাঁধ থেকে জল নিঃসরণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাঁধ থেকে ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হবে, যেখানে আগে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছিল। কাংড়া জেলার ফতেপুর, इंदৌরা এবং দেওরা মহকুমা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। নিচু এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহে প্রভাব
ভারী বৃষ্টির প্রভাব বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের উপরও পড়েছে। রাজ্য জুড়ে ২৮০৯টি ট্রান্সফর্মার বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কুল্লু (১০৯৬), সিমলা (৪০৫), मंडी (৪০৪) এবং সোলান (৩০৪) জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত।
পানীয় জল প্রকল্পগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের ১০৮১টি প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে, যার মধ্যে সিমলা (৩৪৯), কাংড়া (২১২), সোলান (৯১), मंडी (৬৮) এবং কুল্লু (৬৩) জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত।
বর্ষায় কেড়ে নিল ৩৪3 প্রাণ
২০ জুন থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য উদ্বেগজনক। বর্ষাকালে এ পর্যন্ত ৩৪3 জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৯৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার শিকারও রয়েছেন। এছাড়া ১৩৭২টি গবাদি পশু মারা গেছে।
রাজ্যের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
দুর্যোগ ও দুর্ঘটনার কারণে হিমাচল প্রদেশ এ পর্যন্ত ৩৬৯০.৪২ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রে ১১.৪৫ কোটি
উদ্যানপালন ক্ষেত্রে ২২.৫২ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা ভিত্তিক ক্ষতির পরিমাণ—
- মন্ডি: ১২৩১.৬৪ কোটি
- কাংড়া: ১১২৩.৮৯ কোটি
- কুল্লু: ৭৬৩.৫৭ কোটি
- উনা: ৭২২.১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় কোথায় সর্বাধিক বৃষ্টি
গত ২৪ ঘন্টায়ও অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
- ধর্মপুর: ৭৬.৬ মিমি
- করসোগ: ৬৯ মিমি
- কাসৌলি: ৬৭ মিমি
- কান্ডাঘাট: ৫৯ মিমি
- শ্রী নয়নাদেবী জি: ৫৮.৬ মিমি
- ভুবান্তর: ৫৫.৬ মিমি
- বিলাসপুর: ৫০.৮ মিমি
- সিমলা: ৪৭ মিমি
- সোলান: ৪৪.৪ মিমি