হিমাচলে মুষলধারে বৃষ্টিতে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯9 টি রাস্তা বন্ধ। বাড়িঘর, দোকান এবং পানীয় জল প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের ১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হিমাচল বৃষ্টি বিপর্যয়: হিমাচল প্রদেশে বর্ষা মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে লাগাতার বৃষ্টিপাতের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিমলা, বিলাসপুর এবং সোলানের মতো জেলাগুলিতে পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (SDMA) মতে, ২০ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জনের মৃত্যু সরাসরি বৃষ্টির কারণে হওয়া দুর্যোগের ফলে হয়েছে।
হলুদ সতর্কতা জারি, স্বস্তির কোনো সম্ভাবনা নেই
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ১৬ জুলাই-এর জন্য চাম্বা, কাংড়া, মান্ডি এবং সিরমৌর জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২১ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে। তাপমাত্রাও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। উনা এবং ধৌলাকুয়াঁতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে হওয়া দুর্যোগে ৬২ জনের মৃত্যু
SDMA-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃষ্টির কারণে ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা, মেঘ ভাঙা, ডুবে যাওয়া, বাজ পড়া এবং গাছ বা পাথর থেকে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেঘ ভাঙার ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে উঁচু স্থান থেকে পড়ে ১২ জন এবং ডুবে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাজ পড়া এবং সাপের কামড়ে ৫ জন করে মারা গিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জনের মৃত্যু
বৃষ্টির সময় সড়ক দুর্ঘটনায়ও ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে মান্ডিতে ৪ জন, কুল্লুতে ৭ জন এবং किन्नৌরে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছে।
শত শত বাড়িঘর ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত
ভারী বৃষ্টি কেবল জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং ব্যাপক সম্পত্তিরও ক্ষতি করেছে। এখন পর্যন্ত ৩৮৪টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ৬৬৬টি বাড়ি আংশিকভাবে ভেঙে গেছে। ২৪৪টি দোকান এবং ৮৫০টি গোয়ালঘরেরও ক্ষতি হয়েছে।
পানীয় জলের প্রকল্প ও রাস্তা বন্ধ
বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে ১৭১টি পানীয় জল প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মান্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৪২টি প্রকল্প বন্ধ রয়েছে, যেখানে কাংড়াতে ১৮টি এবং সিরমৌরে ১১টি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও রাজ্যে মোট ১৯9 টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মান্ডি জেলায় ১৪১টি, কুল্লুতে ৩৫টি, কাংড়াতে ১০টি, সিরমৌরে ৮টি, উনায় ৩টি এবং চাম্বাতে ২টি রাস্তা এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার এগুলি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে।
রাজ্যের ১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি
মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে আকস্মিক বন্যা এবং মেঘ ভাঙার মতো ঘটনায় রাজ্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি কেন্দ্র সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন।
সরকারের আবেদন ও পদক্ষেপ
রাজ্য সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জনগণকে আবেদন জানাচ্ছে, তাঁরা যেন বিপদজনক এলাকা থেকে দূরে থাকেন এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকেন। ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য NDRF এবং SDRF-এর দল মোতায়েন করা হয়েছে।