প্রথমে সন্দেহ করা হয়েছিল রাজনৈতিক শত্রুতির জেরে খুন। কিন্তু তদন্ত যত গভীরে গিয়েছে, ততই সামনে এসেছে ভয়ঙ্কর এক ব্যক্তিগত গল্প। পুলিশ জানাচ্ছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের টানাপড়েনই কেড়ে নিয়েছে পীযূষ ঘোষের প্রাণ।
কোমরপুর মোড়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্কে গুলি, মৃত্যু তৃণমূল নেতার
রবিবার রাতে বাড়ি থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে কোমরপুর মোড়ে পীযূষ ঘোষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাথার পিছনে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। মুহূর্তে শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা শ্রীনিধিপুর অঞ্চল।
তদন্তে মোড়: রাজনীতি নয়, সম্পর্কের জটিলতা
প্রথমে রাজনৈতিক রেষারেষি বলেই মনে হয়েছিল তদন্তকারীদের। কিন্তু পীযূষের ব্যক্তিগত জীবন অনুসন্ধান করতে গিয়েই আসে মোড়। সারদামণি মজুমদার নামে এক মহিলার সঙ্গে পীযূষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছিল, আর তাতেই শুরু হয় নাটক।
‘এক্স’কে ছাড়তে রাজি ছিলেন না, বাধে সমস্যা
জানা গিয়েছে, সারদামণি নামক ওই মহিলা পরে নতুন করে সম্পর্ক গড়েন রাহুল নামে এক যুবকের সঙ্গে। কিন্তু পীযূষ নাকি মানতে পারেননি এই বিচ্ছেদ। বারবার সারদামণির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন তিনি। সেই বিরক্তিকর আচরণ পৌঁছায় রাহুলের কানে, আর শুরু হয় ষড়যন্ত্র।
পরিকল্পিত খুন: প্রেমিকের হাতেই শেষ জীবন
পুলিশ জানিয়েছে, রাহুল এবং সারদামণি মিলে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পীযূষকে খুনের ছক কষে। রবিবার রাতে তাঁকে ফোন করে বাড়ির বাইরে ডাকা হয়। তারপর কোমরপুর মোড়ে গুলি চালিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় ময়দান থেকে। প্রেমের জটিলতা গড়িয়ে পৌঁছয় রক্তাক্ত পরিণতিতে।
গ্রেপ্তার সারদামণি ও রাহুল, আরও কেউ কি জড়িত?
ঘটনার পর দ্রুত তদন্তে নামে বীরভূম জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যেই সারদামণি মজুমদার ও রাহুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এই দু’জনেই কি কাণ্ডের মূলচক্রী, না কি রয়েছে আরও কেউ? সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারীরা।
আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, নজর রাখছেন পুলিশ সুপার
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে আট সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি। পুরো ঘটনার প্রত্যেক স্তর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই খুনের পিছনে আর কেউ অর্থ, অস্ত্র বা তথ্য সরবরাহ করেছে কি না—তাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
পীযূষের মৃত্যুতে সাঁইথিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া, শোক ও প্রশ্ন একসঙ্গে
তৃণমূল নেতা হিসেবে পীযূষ ঘোষ ছিলেন প্রভাবশালী। তাঁর মৃত্যু ঘিরে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একইসঙ্গে উঠছে প্রশ্ন—একটি সম্পর্কের দ্বন্দ্বে এমন হিংস্র পরিণতি! কে দেবে জবাব সেই গুলির শব্দের?
রাজনীতি নয়, প্রেম ও প্রতারণার ট্র্যাজিক মোড়
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—প্রেম ও সম্পর্কের দ্বন্দ্ব কখনও কখনও রাজনীতির থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। একসময়ের প্রভাবশালী জননেতা নিজের ব্যক্তিগত আবেগের ফাঁদেই হারালেন জীবন।