ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী এটিকে যুব, কৃষক এবং MSME-এর জন্য উপকারী বলেছেন। টেক্সটাইল, সি ফুড, ইঞ্জিনিয়ারিং গুডস ইউকে বাজারে আরও ভালো সুবিধা পাবে।
PM Visit UK: ব্রিটেন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই চুক্তিকে যুব, কৃষক, মৎস্যজীবী এবং ছোট ব্যবসার জন্য লাভজনক বলে অভিহিত করেছেন। এর পাশাপাশি, তিনি বিশ্ব মঞ্চ থেকে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট এবং জোরালো বার্তা দিয়েছেন।
ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হল দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে সহজ ও শুল্কমুক্ত করার একটি ব্যবস্থা। এই চুক্তির অধীনে, উভয় দেশ একে অপরের পণ্যের উপর আমদানি-রপ্তানি শুল্ক কম করে বা সম্পূর্ণভাবে তুলে নেয়। এর উদ্দেশ্য হল বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং ভোক্তাদের কাছে সস্তায় পণ্য সরবরাহ করা।
ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে এই চুক্তির ফলে ভারতীয় টেক্সটাইল, ফুটওয়্যার, জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি, সি ফুড এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী ব্রিটেনে আরও বেশি বাজার পাবে। এর পাশাপাশি ভারতীয় কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্পও নতুন সুযোগ পাবে।
ভারতীয় শিল্পের জন্য নতুন দরজা খুলবে
প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট করেছেন যে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে ভারতের অনেক শিল্প সরাসরি উপকৃত হবে। বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রগুলো, যেগুলোর রপ্তানি ব্রিটেনের দিকে বেশি। ব্রিটেনের বাজারে এখন ভারতীয় টেক্সটাইল, জুতা-স্যান্ডেল, সামুদ্রিক খাদ্য এবং যন্ত্রপাতির মতো পণ্য কম শুল্কে বিক্রি হবে। এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা বাড়বে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
ভারতকে ব্রিটেন থেকে কী লাভ হবে
ব্রিটেন থেকে ভারত মেডিকেল ডিভাইস, এয়ারোস্পেস পার্টস, উচ্চ মানের শিক্ষামূলক সরঞ্জাম, বিলাসবহুল পণ্য এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত আইটেম সস্তা দামে পাবে। এতে ভারতের স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষা খাত আরও শক্তিশালী হবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে শুধু বাণিজ্যই বাড়বে না, প্রযুক্তি হস্তান্তর, উদ্ভাবন এবং দক্ষতা উন্নয়নেও সহযোগিতা বাড়বে। ভারতীয় যুবকরা ব্রিটেনে পড়াশোনা ও কাজের আরও ভালো সুযোগ পেতে পারে।
ভিশন ২০৩৫-এর উপর জোর
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে বলেছেন যে ভারত ও ব্রিটেনের অংশীদারিত্বকে আগামী দশকে একটি নতুন গতি দেওয়ার জন্য উভয় দেশ একসঙ্গে 'ভিশন ২০৩৫'-এর উপর কাজ শুরু করেছে। এই ভিশনের অধীনে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা এবং জনসংযোগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ব মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদ
ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী মোদী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে চরমপন্থী মতাদর্শের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো ধরনের দ্বৈত মানদণ্ডের স্থান নেই।
তিনি আরও বলেন যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে চরমপন্থী শক্তিগুলোকে তাদের মতাদর্শ ছড়ানোর অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। সকল দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান জানানো উচিত। তিনি এও বলেন যে আজকের যুগে উন্নয়নবাদের প্রয়োজন, সম্প্রসারণবাদের নয়।