নকল ওষুধ চেনার উপায়: জীবন বাঁচাতে সতর্কতা জরুরি

নকল ওষুধ চেনার উপায়: জীবন বাঁচাতে সতর্কতা জরুরি

আগ্রাতে, ইউপি এসটিএফ এবং ঔষধ বিভাগ ৩.৩২ কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছে। নকল ওষুধ গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে জীবনঘাতী হতে পারে। এগুলো চেনার জন্য প্যাকেজিং, ব্যাচ নম্বর, কিউআর কোড, রং-আকার এবং বিলের দিকে নজর রাখা জরুরি। সতর্কতা অবলম্বন করাই সুরক্ষিত ওষুধ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়।

নকল ওষুধ কিভাবে চিনবেন: আগ্রাতে, ইউপি এসটিএফ এবং ঔষধ বিভাগের যৌথ দল অভিযান চালিয়ে ৩.৩২ কোটি টাকার নকল ওষুধ জব্দ করেছে। তদন্তে জানা গেছে যে এই ওষুধগুলো অনেক রাজ্যে পাঠানো হচ্ছিল। নকল ওষুধ শুধুমাত্র চিকিৎসায় ব্যর্থতাই নয়, বরং গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে যে সাধারণ মানুষ কিভাবে আসল এবং নকল ওষুধের মধ্যে পার্থক্য বুঝবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে প্যাকেজিং, ব্যাচ নম্বর, কিউআর কোড এবং বিল দেখে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব।

নকল ওষুধ কেন বিপজ্জনক

নকল ওষুধের প্রভাব শুধুমাত্র রোগ নিরাময় না হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি শরীরের ওপর উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা হৃদরোগের মতো গুরুতর অসুস্থতা থাকে এবং সে নকল ওষুধ সেবন করে, তাহলে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। অনেক সময় এই ওষুধগুলোতে ভুল রাসায়নিক মেশানো হয় যা ধীরে ধীরে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন ক্ষেত্রে রোগী বুঝতেও পারে না যে ওষুধ কেন কাজ করছে না এবং আসলে সে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

নকল এবং আসল ওষুধের মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করবেন

ওষুধ কেনার সময় একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই নকল ওষুধ থেকে বাঁচা যায়। এর কিছু সহজ উপায় আছে যা প্রত্যেক ব্যক্তির জানা জরুরি।

  • প্যাকেজিংয়ের দিকে নজর দিন: আসল ওষুধের প্যাকেজিং পরিষ্কার এবং মজবুত হয়। এর ওপরের লেখা স্পষ্ট থাকে। অন্যদিকে, নকল ওষুধের প্যাকেজিং প্রায়শই ঝাপসা প্রিন্টিংযুক্ত বা বানান ভুল ভরা থাকে। অনেক সময় প্যাকেজিং ঢিলেঢালা এবং নিম্নমানের মনে হয়।
  • ব্যাচ নম্বর এবং এক্সপায়ারি তারিখ পরীক্ষা করুন: প্রত্যেক আসল ওষুধের প্যাকেজের গায়ে ব্যাচ নম্বর, ম্যানুফ্যাকচারিং তারিখ এবং এক্সপায়ারি তারিখ স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। নকল ওষুধে প্রায়শই এই নম্বরগুলো সঠিক মনে হয় না বা সমস্ত প্যাকে একই নম্বর লেখা থাকে।
  • বারকোড বা কিউআর কোড স্ক্যান করুন: আজকাল বেশিরভাগ আসল ওষুধ কোম্পানি প্যাকেজিংয়ের ওপর কিউআর কোড দিয়ে থাকে। মোবাইল দিয়ে স্ক্যান করার সঙ্গে সঙ্গেই জানা যায় যে ওষুধটি কোম্পানির রেকর্ডে নথিভুক্ত আছে কিনা। নকল ওষুধে এই কোড হয় থাকেই না, অথবা স্ক্যান করলে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
  • রং এবং আকার দেখুন: আসল ওষুধের রং এবং আকার সবসময় একই রকম হয়। নকল ওষুধের রং হালকা বা অস্বাভাবিকভাবে বেশি উজ্জ্বল হতে পারে। অনেক সময় আকারের মধ্যেও পার্থক্য দেখা যায়।
  • বিল নিয়ে ওষুধ কিনুন: ওষুধ সস্তা হোক বা দামি, সবসময় বিল নিয়ে কিনুন। যদি দোকানদার বিল দিতে অস্বীকার করে, তাহলে এটি সন্দেহের কারণ। বিল ছাড়া ওষুধ আসল হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই।
  • কোম্পানির লোগো এবং সিল পরীক্ষা করুন: আসল ওষুধের প্যাকেজিংয়ের ওপর কোম্পানির লোগো পরিষ্কার এবং একেবারে সঠিক থাকে। নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকরা প্রায়শই লোগো নকল করে, কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখলে পার্থক্য বোঝা যায়।

প্রভাব না দেখলে সতর্ক হোন

যদি কোনো ওষুধ খাওয়ার পরেও রোগের উন্নতি না হয় বা উল্টো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি সেই ওষুধটি কোম্পানি বা ড্রাগ বিভাগে রিপোর্ট করুন, যাতে ভবিষ্যতে তদন্ত করা যায়।

সরকার ও এজেন্সিগুলির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

নকল ওষুধের ব্যবসা এত বড় হয়ে গেছে যে সরকার ও এজেন্সিগুলোকে ক্রমাগত ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আগ্রার ঘটনা এর বড় উদাহরণ। কিন্তু সত্যি এটাই যে যতক্ষণ না সাধারণ মানুষ সতর্ক হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই কারবার বন্ধ করা কঠিন। যেভাবে আমরা সবজি বা শস্য কেনার সময় তার গুণমান দেখি, তেমনই ওষুধ কেনার সময়ও পুরো সতর্কতা জরুরি।

মানুষের সচেতনতাতেই বন্ধ হবে নকল ওষুধের কারবার

নকল ওষুধের ব্যবসা তখনই বন্ধ হবে যখন মানুষ সচেতন হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত ওষুধ কেনার সময় প্যাকেজিং, বারকোড এবং বিলের মতো জিনিস অবশ্যই পরীক্ষা করা। যদি কোনো ওষুধ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে অবিলম্বে তা রিপোর্ট করা উচিত। সাধারণ মানুষের এই সতর্কতা নকল ওষুধ বিক্রেতা চক্রের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ।

Leave a comment