স্বাধীনতা দিবস ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

স্বাধীনতা দিবস ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

স্বাধীনতা দিবসের আগে নয়াদিল্লি জুড়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির একাধিক সতর্কবার্তার ভিত্তিতে জারি হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এই বৃহৎ জনসমাগমকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার হুমকি আরও প্রবল হয়েছে পহেলগাঁও হামলা ও সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর। গোয়েন্দা মহল মনে করছে, এর প্রতিশোধ নিতে জঙ্গি সংগঠনগুলি স্বাধীনতা দিবসের মতো প্রতীকী তারিখকে নিশানা করতে পারে।

বড় জনসমাগম ও ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা অনুপ্রবেশকারীদের লক্ষ্য

কর্তৃপক্ষের মতে, নয়াদিল্লির মতো শহরের বিশাল জনসংখ্যা এবং ঘন বসতি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে। উৎসবমুখর ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে হামলাকারীরা সহজেই গোপন তৎপরতা চালাতে পারে—এমনটাই গোয়েন্দাদের সতর্কতা। লালকেল্লা, ইন্ডিয়া গেট, রাজপথ, কনট প্লেসের মতো জনপ্রিয় এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং সিসিটিভি ফিড ২৪ ঘণ্টা মনিটর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাক-ভিত্তিক জঙ্গি থেকে উত্তর-পূর্বের বিদ্রোহী—সব দিকেই হুমকি

নিরাপত্তা সংস্থাগুলির অনুমান, পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন, আন্তর্জাতিক জেহাদি নেটওয়ার্ক, উগ্র ইসলামপন্থী দল, শিখ জঙ্গি গোষ্ঠী, বামপন্থী চরমপন্থী (LWE) এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন—সব দিক থেকেই ঝুঁকি রয়েছে। শুধু বিদেশি গোষ্ঠী নয়, দেশের ভিতরকার অসন্তুষ্ট গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতারাও পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করতে পারে। এর ফলে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

প্রধান প্রতিপক্ষ চিহ্নিত: গোয়েন্দাদের দাবি

স্বাধীনতা দিবসের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় যুক্ত এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা ইনপুটে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে উঠে এসেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন, বৈশ্বিক জেহাদি নেটওয়ার্ক ও উগ্র ইসলামপন্থী দল। এই গোষ্ঠীগুলি অতীতে বহুবার ভারতের জাতীয় দিবসে হামলার চেষ্টা করেছে। তাই এই বছর নজরদারি আরও কড়া এবং চেকপোস্ট আরও বেশি রাখা হয়েছে।

পরিচয় যাচাই থেকে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ—সবখানে কড়াকড়ি

নিরাপত্তা বাহিনীকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—প্রতিটি কর্মী ও প্রবেশকারীর পরিচয়পত্র কঠোরভাবে যাচাই করতে হবে। সন্দেহজনক আচরণ বা নথির ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। নিষিদ্ধ এলাকায় কোনও বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না, আর সেজন্য অতিরিক্ত মেটাল ডিটেক্টর, বোমা স্ক্যানার এবং ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়েছে।

সম্ভাব্য হামলার বহুমুখী রূপ ও প্রস্তুতি

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সম্ভাব্য হুমকি হতে পারে একাধিক রূপে—দলবদ্ধ সশস্ত্র আক্রমণ, একক নাশকতা, বিস্ফোরণ, কিংবা হঠাৎ জনতার মধ্যে বিক্ষোভ উস্কে দেওয়া। রাজনৈতিক নীতি বা সরকারি সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট গোষ্ঠীগুলি এই সুযোগে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এজন্য প্রতিটি সম্ভাব্য ‘হটস্পট’-এ পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য প্রচারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা

সমস্ত নিরাপত্তা কর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—কোনও ধরনের ছবি, ভিডিও বা স্থানসংক্রান্ত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা যাবে না। কারণ, এই ধরনের তথ্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ব্যবহার করে রুট ও মোতায়েনের বিবরণ বের করতে পারে। অতীতে এই ধরনের ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হামলার চেষ্টা হয়েছে বলেই জানা গেছে।

গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা: ছদ্মবেশে তথ্য চুরি

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা প্রায়ই অফিসার, সাংবাদিক বা সরকারি কর্মচারী সেজে নিরাপত্তা বন্দোবস্তের তথ্য হাতানোর চেষ্টা করে। ফলে প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে—কোনও সন্দেহজনক প্রশ্ন বা ব্যক্তি চিহ্নিত হলে সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়রদের অবহিত করতে হবে এবং একেবারেই তথ্য শেয়ার করা যাবে না।

তথ্য গোপনীয়তার জন্য বিশেষ প্রোটোকল কার্যকর

সব নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও সংবেদনশীল ইউনিটে বিশেষ প্রোটোকল চালু হয়েছে। অনুমোদিত ব্যক্তির বাইরে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অ্যাক্সেস দেওয়া যাবে না। প্রতিটি কল লগ, রেডিও কমিউনিকেশন ও ডাটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপশন প্রযুক্তিতে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই—যে কোনও মূল্যে তথ্য ফাঁস আটকানো।

Leave a comment