আগামী ২৬শে অগাস্ট ভারতীয় নৌসেনার বহরে যুক্ত হতে চলেছে দুটি অত্যাধুনিক স্টিলথ যুদ্ধজাহাজ – উদয়গিরি (এফ৩৫) এবং হিমগিরি (এফ৩৪)। বিশাখাপত্তনমে জলবরণের অনুষ্ঠানে এই দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নৌসেনার হাতে তুলে দেওয়া হবে।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় নৌসেনা তাদের শক্তি এবং কৌশলগত ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ক্রমাগত নতুন আধুনিক যুদ্ধজাহাজ তাদের বহরে যুক্ত করছে। এই ধারাবাহিকতায়, ২৬শে অগাস্ট দুটি অত্যাধুনিক স্টিলথ ফ্রিগেট উদয়গিরি (F35) এবং হিমগিরি (F34) ভারতীয় নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই দুটি যুদ্ধজাহাজ বিশাখাপত্তনমে আয়োজিত একটি বিশেষ জলবরণ অনুষ্ঠানে নৌসেনার হাতে তুলে দেওয়া হবে।
উদয়গিরি এবং হিমগিরি: দেশীয় যুদ্ধজাহাজের পরিচিতি
- উদয়গিরি এবং হিমগিরি উভয়ই প্রোজেক্ট 17A-এর অধীনে নির্মিত স্টিলথ ফ্রিগেট, যা ভারতীয় নৌসেনার চাহিদা অনুযায়ী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত।
- উদয়গিরি প্রোজেক্ট 17A-এর দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ, যা মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL) তৈরি করেছে।
- হিমগিরি এই প্রকল্পের প্রথম যুদ্ধজাহাজ, যা কলকাতা स्थित গার্ডেন रीच শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (GRSE) নির্মাণ করেছে।
- এই প্রথমবার দুটি স্বনামধন্য দেশীয় জাহাজ প্রস্তুতকারক সংস্থা একসঙ্গে একই স্থানে যুদ্ধজাহাজের জলবরণ করছে, যা ভারতের সামুদ্রিক সুরক্ষায় आत्मनिर्भरতা-কে প্রতিফলিত করে।
প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত শক্তি
১. আকার এবং স্টিলথ ডিজাইন
দুটি ফ্রিগেট পুরনো শিবালিক-শ্রেণির যুদ্ধজাহাজের তুলনায় প্রায় ৫% বড় এবং এর ওজন প্রায় ৬,৭০০ টন। এর বিশেষত্ব হল স্টিলথ ডিজাইন, যার ফলে এই যুদ্ধজাহাজ রাডার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থা থেকে নিজেদের আড়াল করতে পারে এবং শত্রুদের ধোঁকা দিতে সক্ষম। এই জাহাজগুলির CODOG (Combined Diesel Or Gas) পাওয়ারট্রেন প্রযুক্তি এদের ডিজেল এবং গ্যাস উভয় জ্বালানিতে চলতে সাহায্য করে, যার ফলে তারা সমুদ্রে দ্রুততা এবং স্থিতিস্থাপকতা উভয়ই অর্জন করে।
২. অস্ত্র এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা
উদয়গিরি এবং হিমগিরি বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত:
- ভূমি থেকে ভূমি-তে আঘাত হানতে সক্ষম সুপারসনিক মিসাইল – শত্রু জাহাজ ধ্বংস করার জন্য।
- মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম মিসাইল – আকাশপথে সুরক্ষার জন্য।
- ৭৬ এমএম-এর এমআর গান – মাল্টিপারপাস গান সিস্টেম, যা ভূমি এবং আকাশ উভয় ধরনের লক্ষ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ৩০ এমএম এবং ১২.৭ এমএম-এর ক্লোজ-ইন ওয়েপন সিস্টেম (CIWS) – রকেট এবং মিসাইল হামলা থেকে বাঁচানোর জন্য।
- অ্যান্টি-সাবমেরিন অস্ত্র – শত্রু ডুবোজাহাজ থেকে সুরক্ষার জন্য।
এই অস্ত্রগুলির সাহায্যে এই ফ্রিগেটগুলি শুধুমাত্র সমুদ্রের যুদ্ধে দক্ষ তাই নয়, উচ্চ স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে শত্রুদের জাহাজ বা মিসাইল এর কাছে ঘেঁষতে পারে না।
আত্মনির্ভর ভারতের এক শক্তিশালী উদাহরণ
ভারতীয় নৌসেনার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, এই যুদ্ধজাহাজগুলি কঠিন সামুদ্রিক পরীক্ষায় সফল হয়েছে। এর কাঠামো, মেশিনারি, অগ্নিনির্বাপণ, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন এবং কমিউনিকেশন সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত। এই জলবরণ অনুষ্ঠান ভারতীয় নৌসেনার আত্মনির্ভর ভারত-এর প্রতি অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
এই বছর ভারতীয় নৌসেনায় আরও বেশ কয়েকটি দেশীয় জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজ যুক্ত করা হয়েছে, যা দেশের সামুদ্রিক সুরক্ষা এবং কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করছে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- বিধ্বংসী আইএনএস সুরাট
- ফ্রিগেট আইএনএস নীলগিরি
- ডুবোজাহাজ আইএনএস वाघशीर
- অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধজাহাজ আইএনএস অর্ণালা
- ডাইভিং সহায়তা জাহাজ আইএনএস নিস্তার
এই সমস্ত জাহাজ ভারতীয় নৌসেনার বহুমুখী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশের সুরক্ষা এবং কৌশলগত প্রভাবকে আরও ব্যাপক করে তুলতে সহায়ক।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নৌসেনার শক্তি
ভারতীয় নৌসেনা শুধুমাত্র ভারতীয় সমুদ্রসীমা রক্ষা করে না, বরং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদয়গিরি এবং হিমগিরি-র মতো আধুনিক স্টিলথ ফ্রিগেট, যা দেশীয় প্রযুক্তি এবং অস্ত্রে সজ্জিত, তা বিশ্বব্যাপী ভারতের সামুদ্রিক শক্তির প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করবে।
এই যুদ্ধজাহাজগুলির ক্ষমতা ভারতকে একটি শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভর সামুদ্রিক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।