কেরালায় নার্স নিমিষা প্রিয়াকে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এখন ধর্মীয় নেতা এবং ভারতের প্রচেষ্টায় তার ফাঁসি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
Nimisha Priya Case: কেরালার নার্স নিমিষা প্রিয়াকে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তবে এখন একটি বড় স্বস্তির খবর পাওয়া গেছে। ১৬ জুলাই তারিখে নির্ধারিত ফাঁসি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সূত্রানুসারে, ইয়েমেনের কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সেইসব প্রচেষ্টার ফল যা গত কয়েক মাস ধরে নিমিষার মুক্তি অথবা অন্ততপক্ষে সাজা স্থগিত করার জন্য ক্রমাগতভাবে চালানো হচ্ছিল।
২০১৭ সাল থেকে জেলে বন্দি নিমিষা প্রিয়া
নিমিষা প্রিয়া গত সাত বছর ধরে ইয়েমেনের জেলে বন্দি রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা গেছে, নিমিষা মাহদিকে অজ্ঞান করার জন্য ইনজেকশন দিয়েছিলেন, যাতে তিনি তাঁর পাসপোর্ট ফেরত পেতে পারেন। কিন্তু ইনজেকশনের ওভারডোজের কারণে মাহদির মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর নিমিষাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। মার্চ ২০১৮-এ ইয়েমেনের উচ্চ আদালতও এই সাজা বহাল রাখে। সেই থেকে তিনি জেলেই রয়েছেন।
পুরো ঘটনাটি কী
নিমিষা প্রিয়া কেরালার পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা। তিনি একজন প্রশিক্ষিত নার্স এবং প্রায় এক দশক ধরে ইয়েমেনে সেবা দিচ্ছিলেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাঁর পুরো পরিবার—স্বামী এবং মেয়ে—সঙ্গে ছিল, কিন্তু গৃহযুদ্ধের কারণে ২০১৬ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসেন। নিমিষা ইয়েমেনে থেকে যান কারণ তিনি চাইলেও দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি।
তালাল আব্দো মাহদি নামে এক ইয়েমেনি নাগরিকের সঙ্গে তাঁর পেশাগত এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। অভিযোগ, মাহদি নিমিষার পাসপোর্ট নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং যখন নিমিষা পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন তিনি মাহদিকে অজ্ঞান করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করেন। এই ওষুধই মাহদির মৃত্যুর কারণ হয়।
রক্তের ক্ষতিপূরণ এবং ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতা
ইয়েমেনে ইসলামিক আইন শরিয়া অনুসারে, হত্যার মামলায় মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের (রক্তের ক্ষতিপূরণ) বিনিময়ে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে। নিমিষার ফাঁসি স্থগিত করার জন্য ভারত এবং ইয়েমেনের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় স্তরে আলোচনা চলছিল।
ভারতের প্রভাবশালী সুন্নি নেতা কান্থাপুরাম এ পি আবুুবাক্কার মুসলিয়ার এবং ইয়েমেনের সুফি আলেম শেখ হাবিব ওমর বিন হাফিজ এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় মৃতের পরিবারকে আলোচনার জন্য রাজি করানো হয়। এই প্রথম তালাল মাহদির পরিবার কোনো আলোচনার জন্য রাজি হয়েছিল।
মঙ্গলবার ইয়েমেনের ধামার শহরে একটি বৈঠক হয়, যেখানে মৃতের পরিজন এবং সুফি প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই বৈঠকের পর আশা করা হচ্ছে যে রক্তের ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করে পরিবার নিমিষাকে ক্ষমা করতে পারে। এই কারণেই ফাঁসির তারিখ স্থগিত করা হয়েছে।