ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ২৪তম পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় দেশ ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সীমান্ত বাণিজ্য বাজার খোলা, সীমানা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ দল গঠন এবং পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
China India Boundary Meeting: চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সাম্প্রতিক ভারত সফর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াং ই ১৮ ও ১৯ অগাস্ট ভারতে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
তাঁর ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই সময়ে বিশেষ প্রতিনিধিস্তরীয় ২৪তম পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তে উত্তেজনা কমানো, শান্তি বাড়ানো এবং বিরোধ মেটানোর জন্য উভয় পক্ষ গভীরভাবে আলোচনা করে।
সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় সন্তোষ প্রকাশ
বৈঠকে ওয়াং ই বলেন যে কাজানে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের পর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি এই কথা উল্লেখ করেন যে ২৩তম পর্যায়ের আলোচনার পর থেকে ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। ভারত ও চীন উভয় পক্ষই মনে করে যে সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা উভয় দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের জন্য জরুরি।
সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার অঙ্গীকার
ভারত ও চীনের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। উভয় দেশ মনে করে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত এবং সীমান্ত বিরোধ মেটানোর জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য কাঠামো খুঁজে বের করা উচিত।
তিনটি বাণিজ্য বাজার খোলার বিষয়ে সম্মতি
এই আলোচনার সবচেয়ে বড় ফল হল উভয় পক্ষ তিনটি ঐতিহ্যপূর্ণ সীমান্ত বাণিজ্য বাজার (Traditional Boundary Trade Markets) পুনরায় খুলতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এই বাণিজ্যিক পথগুলো খোলার ফলে সীমান্তের উভয় দিকে বসবাসকারী মানুষেরা উপকৃত হবেন এবং বাণিজ্যিক কাজকর্ম আবার দ্রুত হতে শুরু করবে।
সীমানা নির্ধারণ (Demarcation)-এর জন্য বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তৈরি হবে
ভারত ও চীন স্থির করেছে যে WMCC (Working Mechanism for Consultation and Coordination on India-China Border Affairs)-এর কাঠামোর অধীনে একটি বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী তৈরি করা হবে। এই গোষ্ঠী সেই এলাকাগুলোতে সীমানা নির্ধারণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখবে যেখানে পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে।
সীমানা নির্ধারণ (Demarcation)-এর এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ এই প্রক্রিয়াই ভবিষ্যতে সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন কার্যসমিতি
আলোচনায় এই বিষয়েও সম্মতি হয়েছে যে WMCC-এর অধীনে একটি নতুন কার্যসমিতি তৈরি করা হবে। এই গোষ্ঠী সীমান্তের কার্যকরী ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণকে আরও শক্তিশালী করবে যাতে কোনওরকম সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি না হয় এবং শান্তি বজায় থাকে।
পূর্বাঞ্চলীয় ও মধ্য সেক্টরেও আলোচনা হবে
এখন পর্যন্ত সীমান্তে সাধারণ স্তরের আলোচনা মূলত পশ্চিমাঞ্চল (Western Sector)-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এইবার উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে যে পূর্বাঞ্চল (Eastern) ও মধ্য (Middle) সেক্টরেও এই ধরনের আলোচনা শুরু করা হবে। পশ্চিমাঞ্চলে শীঘ্রই নতুন পর্যায়ের জেনারেল লেভেল আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেল সক্রিয় থাকবে
উভয় দেশ এই বিষয়ে একমত হয়েছে যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলগুলির সক্রিয় ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ এখন থেকে কথাবার্তা শুধুমাত্র নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সামরিক স্তরেও যোগাযোগ বজায় রাখা হবে যাতে ঘটনাস্থলেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
সীমান্ত-পারাপারের নদীগুলিতে সহযোগিতা
আলোচনায় সীমান্ত-পারাপারের নদীগুলির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। উভয় দেশ স্থির করেছে যে নদী সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের বর্তমান চুক্তিকে পুনর্নবীকরণ করা হবে।
চীনা পক্ষ মানবিকতার খাতিরে ভারতের সঙ্গে জরুরি জল সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। এর সরাসরি সুবিধা বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
২০২৬ সালে পরবর্তী আলোচনা হবে
ভারত ও চীনের মধ্যে এই বিষয়েও সম্মতি হয়েছে যে ২০২৬ সালে চীনে এই আলোচনার ২৫তম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্ধারিত কর্মসূচি উভয় দেশের অভিপ্রায়কে প্রতিফলিত করে যে সীমান্ত বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রক্রিয়া ক্রমাগতভাবে চলতে থাকবে।