ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: দিল্লিতে ১৩তম দফা আলোচনা শুরু, জোরদার হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ভারত-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: দিল্লিতে ১৩তম দফা আলোচনা শুরু, জোরদার হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) মধ্যে এফটিএ-এর ত্রয়োদশ আলোচনা দিল্লিতে শুরু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিবাদের মধ্যে এই আলোচনা ভারত-ইইউ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

India-EU Trade Agreement: ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)-এর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (Free Trade Agreement, FTA) সংক্রান্ত ত্রয়োদশ আলোচনা এই সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই পদক্ষেপটি ভারত এবং ইইউ-এর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক সংক্রান্ত চলমান উত্তেজনার মধ্যে, এই আলোচনা ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ ট্রেড কমিশনারের দিল্লি সফর

এই আলোচনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেড কমিশনার মারোস সেফকোভিচ এবং এগ্রিকালচার কমিশনার ক্রিস্টোফ হ্যানসেন ভারতে আসছেন। তাঁদের নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেবে। ভারতের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং কৃষি মন্ত্রী शिवराज সিং চৌহান এই আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন। রুলস অফ অরিজিন, শুল্ক এবং সংবেদনশীল পণ্যের জন্য বাজার সুবিধা নিয়ে আলোচনার জন্য উচ্চ-পদস্থ ভারতীয় আধিকারিকরাও আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন।

ভারত-ইইউ এফটিএ: আলোচনার মূল বিষয়

ভারত এবং ইইউ-এর মধ্যে ২৭টি অধ্যায় রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি অধ্যায়ে ইতিমধ্যেই সমঝোতা হয়েছে। এই অধ্যায়গুলির মধ্যে শুল্ক সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SMEs)-এর সমর্থন, বিবাদ নিষ্পত্তি, ডিজিটাল বাণিজ্য, প্রতিযোগিতা এবং ভর্তুকি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দ্বাদশ অধ্যায়টি মূলধনের প্রবাহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং এটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের চাপের কারণে, ভারতকে অন্যান্য প্রধান অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইইউ, যা ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল, এই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলিতে মতবিরোধ

তবে, কিছু ক্ষেত্রে মতবিরোধ এখনও বিদ্যমান। বিশেষ করে কৃষি পণ্য, চাল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের শুল্ক এবং রপ্তানি উৎস নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ইইউ বোঝে যে ভারতের সংবেদনশীলতাগুলি গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচনায় এগুলি বিবেচনা করা হবে।

ভারত-ইইউ এফটিএ আলোচনার গুরুত্ব

এই আলোচনা ভারতের বাণিজ্য নীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান বিবাদ এবং শুল্ক যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে, ভারতকে কৌশলগতভাবে তার সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজন। এফটিএ-এর চূড়ান্ত রূপ এই বছরের শেষের দিকে প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে ২০২৬ সালের ভারত-ইইউ শিখর সম্মেলনে এটি অনুমোদন করা যায়।

আলোচনার নেতৃত্ব এবং বৈঠক

ভারতের পক্ষ থেকে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রী আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে ইইউ-এর দলে ট্রেড ও এগ্রিকালচার কমিশনাররা প্রধান ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়াও, উভয় পক্ষের উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, সংসদীয় বাণিজ্য প্রতিনিধি এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিনিধিদলও উপস্থিত থাকবে। এই বৈঠকগুলি উভয় পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার গভীরতা প্রকাশ করে।

১৩তম এফটিএ পর্যায়: পূর্ববর্তী অগ্রগতি

ভারত-ইইউ এফটিএ-এর আলোচনা ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল, কিন্তু শুল্ক এবং বাজার সুবিধা নিয়ে মতবিরোধের কারণে এটি বেশ কয়েকবার স্থগিত হয়েছিল। এখন এই আলোচনা পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর এবং নির্ধারক বলে মনে করা হচ্ছে। এবার আলোচনায় বাণিজ্য, মেধা সম্পত্তি (Intellectual Property, IP), ডিজিটাল বাণিজ্য, এস এম ই, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা এবং বিবাদ নিষ্পত্তির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে।

এফটিএ-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

ব্যাপক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য বিবাদ এবং শুল্ক যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য ইইউ-এর সাথে এফটিএ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই চুক্তি কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াবে না, বরং ভারতের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের সুযোগও নিয়ে আসবে।

এই এফটিএ থেকে ভারতের সম্ভাব্য সুবিধা

এফটিএ-এর আওতায় ভারত ইউরোপীয় বাজারগুলিতে উন্নততর প্রবেশাধিকার পাবে। এটি ক্ষুদ্র ব্যবসা, ডিজিটাল বাণিজ্য এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, ভারত-ইইউ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।

আমেরিকা এবং শুল্ক বিবাদের প্রভাব

ভারত-মার্কিন শুল্ক বিবাদ ভারতকে অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ইইউ, যা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, এই পরিস্থিতিতে ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করতে পারে।

এই বছরের শেষের দিকে এফটিএ-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হবে। এরপর, ২০২৬ সালের শুরুতে ভারত-ইইউ শিখর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে এফটিএ-এর অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব চালু করা হবে।

Leave a comment